রাজু আহমেদ; ২৬ মে ২০২৫
ঢাকা, রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জুলাইয়ের গণঅভ্যু’ত্থানে চোখ হারানো চার তরুণ বি’ষপান করেছেন। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসের বৃত্তে ঘুরলেও বাস্তব কোনো সহায়তা না পাওয়ায় চূড়ান্ত হতাশা থেকেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের পরিবার ও সহযোদ্ধাদের।
আ’হ’তরা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে নিরাপদ ভবিষ্যৎ, গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে আয়োজিত আন্দোলনে অংশ নেয়ার সময় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে এক বা দুই চোখ হারান। তখন সরকার, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন তাদের উন্নত চিকিৎসা ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু গত ৯ মাসে তারা পেয়েছেন শুধু আশ্বাস—বাস্তব উদ্যোগ শূন্য।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেলে জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে একটি বৈঠক চলাকালীন সময়ে ওই চার তরুণ তাদের দাবি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন। সিইও তাদের অপেক্ষা করতে বললে, বারবার অবহেলিত হওয়ার ক্ষো’ভে ও মানসিক ভেঙে পড়ার ফলে তারা সেখানেই বি’ষপান করেন।
তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চারজনই বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।
ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই লিখেছেন, “চোখ হারিয়েও ন্যায় হারানো এই তরুণদের কষ্ট সহ্য করার মতো নয়”, “রাষ্ট্র কি সত্যিই তাদের সন্তানদের দেখে না?”—এমন শত শত পোস্টে মুখর ফেসবুক, এক্স (টুইটার) ও ইনস্টাগ্রাম।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অবহেলার ধারাবাহিক ফল।” তাদের দাবি, সরকারকে অবিলম্বে আহতদের উন্নত চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা এবং পুনর্বাসনের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে।
এই ঘটনা শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার প্রতিচ্ছবি। চোখ হারানো তরুণদের বি’ষপানের ঘটনা একটি প্রশ্নবিদ্ধ রাষ্ট্রব্যবস্থার কফিনে আরেকটি শক্ত পেরেক ঠুকে দিল।