রাজু আহমেদ; ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ইং
ঢাকা, পল্লবী মিরপুর ১২ মোল্লা বস্তি। শীতের এই তীব্র রাতে খোলা আকাশের নিচে কুঁকড়ে থাকা হাজারো মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন—কেন তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হলো? প্রায় ২০ হাজার পরিবার এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়াই অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ, কেউই রেহাই পাননি।

সরকারের বস্তি উচ্ছেদ অভিযানের পর আশ্রয়হীন মানুষের অসহায় অবস্থা।”
গৃহহীন মানুষের আর্তনাদ; “পুলিশ আমাদের খুব মেরেছে, গলা ধরে টেনে পিটিয়েছে। বলেছে, বস্তি না ছাড়লে হত্যা মামলায় ফাঁসাবে,” বলছিলেন এক বৃদ্ধ বাসিন্দা। শত শত পুলিশ আর কর্মকর্তার উপস্থিতিতে, যেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বস্তির মানুষগুলো হাইকোর্টে রীট করেও কোনো সুরাহা পাননি। একজন বাসিন্দার কথায়, “হাইকোর্টের আদেশের কাগজও পারলে ছুড়ে ফেলে দেয়। যেন তারা কোনো আইনকেই মানে না।” বসতভিটা হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন এক নারী:
মানবিক বিপর্যয় ও সামাজিক বৈষম্য; শিশুরা খালি গায়ে শীতে কাঁপছে। অসুস্থ বৃদ্ধরা শুয়ে আছেন পলিথিনের নিচে। রাস্তায় কিংবা ভাঙা বস্তির ভিতর পেপার কাগজ দিয়ে কোনো মতে রাত কাটাচ্ছেন তারা। তাদের চোখে-মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। “আমাদের জন্য কেউ আসে না। সরকার দেখেও দেখে না। ছাত্র সংগঠনগুলোও পাশে নেই,” বলছিলেন আরেক বাসিন্দা।
রাজনৈতিক নেতাদের উদাসীনতা; অসহায় মানুষের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। স্থানীয় বিএনপি নেতাসহ যুবদল, সেচ্ছাসেবক দলের দেখা মেলেনি। অনেক সময় জনসভায় স্লোগান শোনা যায়, ১৬ আসনের অভিভাবক , “জনতার নেতা”, “১৬ আসনের মাটি অমুক ভাইয়ের ঘাটি”। কিন্তু বাস্তবে বস্তিবাসীদের পাশে কোনো ভাইকে দেখা যায়নি। একটা কম্বল দিয়েও সাহায্য করেনি, পলিথিনের ঘর, কাগজ দিয়ে ঘর বানিয়ে রাত্রী যাপন করছেন শতশত মানুষ, অনেকে আবার নতুন ঠিকানার সন্ধানে ছুটছেন!
বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক: স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জমির মালিকানা নিয়ে নানা অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। “৭ একরের বাইরে মালিকানার জমিতেও ঘর ভেঙে দেওয়া হলো। এখানে বিল্ডিং বানানোর পরিকল্পনায় আমাদের তাড়ানো হয়েছে,” অভিযোগ এক বাসিন্দার।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত; পুলিশের আচরণ ও উচ্ছেদ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একজন কাতর কণ্ঠে বলেন, “আমাদের এমনভাবে মেরেছে যেন আমরা অপরাধী। আমরা কি রোহিঙ্গা? নাকি দেশদ্রোহী?”

এই শীতে বস্তিবাসীদের এখন পলিথিন মুড়ানো ঘরে বসবাস!
করুণ বাস্তবতা: শত শত পরিবার শীতে কাঁপছে। অনেকেই কাঁথা বা গরম কাপড়ের অভাবে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শিশুর কান্না, মায়ের অসহায় চাহনি, আর বৃদ্ধদের আর্তনাদ মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের করুণ ছবি ফুটে উঠেছে।

কনকনে শীতে কাগজ মুচড়ানো ঘরে বসবাস;”
মোল্লা বস্তির এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সমাজের বৈষম্য আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তবতা। এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। তাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে সমাজ ও সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।