রূপনগর–পল্লবীতে নতুন কমিটি গঠনে ত্যাগী নেতা, নাগরিক সমাজ, শিক্ষক–ব্যবসায়ী ও তরুণ ভোটারদের একযোগে দাবি- স্বচ্ছতা আর জনগণের ভালোবাসাই হোক মানদণ্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঢাকা মহানগর উত্তরের রূপনগর ও পল্লবী এলাকায় যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের আসন্ন থানার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বেড়েছে।
স্থানীয় ত্যাগী নেতা, নাগরিক সমাজ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতিনিধি ও তরুণ ভোটাররা সরব হয়েছেন—বিতর্কিতদের বাদ দিয়েই কমিটি গঠন করতে হবে।
রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ত্যাগী নেতা বলেন, “আমি কারো মাথায় বারি দিয়ে জায়গা দখল করতে জানি না। বস্তি দখল বা পুলিশের সোর্স হয়ে টাকা কামানো আমার দ্বারা সম্ভব নয়। রাজপথে আন্দোলন করেছি, মামলা-হামলা খেয়েছি। আমরা চাই দলে পরিচ্ছন্ন নেতাদের মূল্যায়ন হোক।”
রূপনগরের স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা পুলিশের সোর্স হয়ে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিয়েছেন, বস্তি নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং ব্যক্তিগত বাহিনী গড়ে তুলেছেন। বিএনপি–যুবদল–ছাত্রদলের ত্যাগী কর্মীরা তার অত্যাচারে নীরব। তবু মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল তাকে বহিষ্কার করেনি।
পল্লবীতে মাদকের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কারণে সে ও তার পরিবার বহুবার জেল খেয়েছেন। অথচ তিনি এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। এই দ্বৈতচরিত্র তৃণমূলে প্রশ্নের ঝড় তুলেছে।
পল্লবীর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও সমাজকর্মী মো. সিরাজুল ইসলাম মন্তব্য করেন, “যারা দখলবাজি, চাঁদাবাজি বা মাদক ব্যবসায় জড়িত—তাদের কমিটিতে রাখলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে হবে। আমরা চাই ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল এমন স্বচ্ছ কমিটি দিন যাতে বিএনপি ভোটের মাঠে শক্তি নয়, ভালোবাসা দিয়ে জয়লাভ করতে পারে।”
এলাকার তরুণ ভোটার নাঈম হাসান বলেন, “বিতর্কিতরা ভোট টানতে পারে না, শুধু মাঠ নষ্ট করে। ডাকসু নির্বাচনে যেমন অনেকেই বলেছিল ভোট দেব, কিন্তু গোপনে অন্যখানে গেছে, এখানেও তাই হবে। তাই দাগীদের জায়গা দেওয়া যাবে না।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “চাঁদাবাজি আর মাদক নিয়ে যারা রাতারাতি বড়লোক হয়েছে, তারা রাজনীতিতে আসলে এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ী বাঁচে না। বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে হলে এসব অপরাধীকে ছেঁটে ফেলতে হবে।”
রূপনগরের এক শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের প্রতিনিধি রাবেয়া বেগম বলেন, “আমাদের পরিবার ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছে। আজ দেখি কিছু দাগী—আপরাধী যুবলীগ-সন্ত্রাসীদের আশ্রয় নেয়, এবং বিএনপির নাম ভাঙিয়ে নিজস্ব স্বার্থ হাসিল করে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। নতুন কমিটিতে যেনো ত্যাগী, শিক্ষিত ও সৎ নেতারা থাকেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
নাগরিক সমাজ মনে করছে, ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে শক্তি দেখানো কিংবা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা দলকে এগিয়ে নেবে না। বরং তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো অপরাধীকে দলে স্থান না দিলে সংগঠনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রূপনগর–পল্লবীর নতুন কমিটি এখনই একটি পরীক্ষা। এখানে যদি ত্যাগী, আন্দোলনকারী ও পরিচ্ছন্ন নেতারা জায়গা পায়, তবে বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা বহুগুণে বাড়বে। অন্যথায়, বিতর্কিতদের দাপটে সাধারণ মানুষ মুখে সমর্থন জানালেও ভোটের মাঠে ভিন্ন অবস্থান নেবে।
পল্লবীর এক বিএনপি নেতা বলেন, “আপনি সারা পল্লবী ঘুরে দেখেন, আমরা ব্যানার-সাইনবোর্ডের রাজনীতি করি না।”
কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি
দলীয় সূত্র বলছে, রূপনগর ও পল্লবী থানা সেচ্ছাসেবক দলের পুর্নাঙ্গ কমিটি ২০–২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঘোষণা হতে পারে। তৃণমূল স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—স্বচ্ছ নেতৃত্ব ছাড়া কমিটি জনআস্থার দুর্গ হবে না, বরং ক্রমেই ক্ষোভ ও অবিশ্বাসে বিএনপিকে দুর্বল করবে। ত্যাগীরা স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের পক্ষে, আর বিতর্কিতরা পদে জায়গা পেতে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। ফলাফল যা-ই হোক, এক কথা পরিষ্কার—ত্যাগীদের মর্যাদা না দিলে কমিটি জনমতের আস্থার দুর্গ নয়, বিএনপির জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে নির্বাচনের
