নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৮ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকার রূপনগরে রাজনৈতিক পরিচয়ের মুখোশে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলা কুখ্যাত যুবলীগ নেতা শরিফ মাতবর এখন বিএনপির ‘ত্যাগী নেতা’ সেজে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
ঢাকা ১৪ ও ১৬ আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী দলের এমপিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি একসময় ছাত্র আন্দোলন দমনে নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছিলেন শিয়ালবাড়ী বস্তি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব। যুবলীগের ছত্রছায়ায় গড়ে তোলেন কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসা, জমি দখল ও অবৈধ সংযোগ বাণিজ্য। মাসে আয় করতেন লাখ লাখ টাকা। সোনার বাংলা মার্কেটসহ সরকারি-বেসরকারি জমি পৈতৃক জমি দাবি করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এনজিওর নামে ক্ষুদ্রঋণ ও এককালীন টাকা রাখলে অধিক মুনাফা দেয়ার নামে শত শত অসহায় বস্তিবাসীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন শরিফ মাতবর।
৫ আগস্ট ছাত্র ইমন হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতারের পর গা-ঢাকা দেন, তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসে শুরু করেন ‘উভয়মুখী রাজনীতি’র নতুন খেলা। কখনো ‘জয় বাংলা’র শ্লোগান, কখনো ‘ধানের শীষ’ হাতে মিছিল—সবই নিজের অপরাধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার স্ট্র্যাটেজি।
যুবলীগের রূপনগর থানা প্রচার সম্পাদক হয়ে এখন স্বেচ্ছাসেবক দলে সক্রিয় হয়ে ওঠা শরিফ মাতবর বর্তমানে বিএনপির নাম ব্যবহার করে দখল ও চাঁদাবাজির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাসব্যাপী ইফতার বিতরণের নামে লক্ষাধিক টাকার অস্বচ্ছ লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তার পেছনে রয়েছে কিছু সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতা ও দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশের ছায়া। ফলে একাধিক হত্যা, মাদক ও চাঁদাবাজির মামলা থাকা সত্ত্বেও তিনি থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ভাষায়, “এই ধরনের মুখোশধারী অপরাধীরা রাজনীতির জন্য ভয়াবহ হুমকি। তারা শুধু দল বদলায় না, বদলায় অপরাধ ঢাকবার কৌশল।”
সচেতন নাগরিকদের প্রশ্ন—শরিফ মাতবরদের মতো রাজনৈতিক বর্ণচোরারা যদি আইনের ঊর্ধ্বে থাকেন, তবে কি আদৌ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব?