অপরাধ জোনে ব্যানার যুদ্ধ, দখলবাজ নেতাদের চাঁদাবাজি-মাদক প্রভাব
রাজু আহমেদ │ ঢাকা │ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী ও রুপনগর এলাকায় রাজনৈতিক দলের ব্যানার-পোস্টারের দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিকদল এবং জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে এলাকা এখন ছয়লাব।
বিশেষ করে পল্লবীর লাল মাটিয়া, অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড, বাউনিয়াবাদ, কালসী, পুরাতন থানা রোড, ২নং ওয়ার্ড সিটি করপোরেশন অফিস এলাকা, মুসলিম বাজার, পলাশনগর, এভিনিউ ৫, প্যারিস রোড, বিরারি ক্যাম্প, ভাষানী মোড়, ঝুটপট্রি, হোপের গলি, মিরপুর ১০ গোলচত্বর, মিরপুর ১১ বড় মসজিদের ঢাল ও নাভানার মোড়, মিরপুর ১২, মদের বারের উল্টোপাশ, ঝিলপাড় বস্তি, কালাপানি বস্তি, রাজুর বস্তি, টেকেরবাড়ী ও হিন্দু পাড়া বস্তি এলাকায় ব্যানার-পোস্টারের দাপট সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। পাশাপাশি রাতে সড়কে বাস পার্কিং দখল, অটোরিকশার গ্যারেজ, বাসে ব্যাক-মানি, বিভিন্ন পরিবহনের চাঁদা আদায় (ওয়েবিল নাম করে) এবং পল্লবী মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকাও এর বাইরে নয়। এছাড়াও রুপনগরের দুয়ারীপাড়া মোড়, সড়ক দখল করা বাজার, আণবিক শক্তি এলাকা, আবাসিক মোড়, শিয়ালবাড়ী মোড়, সোনার বাংলা মার্কেট, সড়ক-ফুটপাত, রুপনগর থানার আশপাশের গলি, ঝিলপাড় বস্তি, ট-ব্লক বস্তি, চলন্তিকা মোড় ও মিল্কভিটা মোড়েও ব্যানারের যুদ্ধ চলছে।
অপরাধ জোনে ব্যানারের দাপট
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আবাসিক মোড়ে গায়ে-গায়ে পোস্টার, বস্তি, মাদরাসা ও মসজিদের দেয়ালে ব্যানার, এমনকি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ ঘর, অবৈধ বাস পার্কিং, সড়ক দখল বাণিজ্য, চোরাই মোবাইল মার্কেট, মুরগী পট্টি, খিচুড়ি পট্টি ও মাদক স্পট—সব জায়গাতেই পোস্টার টাঙানো হয়। ব্যানার লাগানো নিয়ে একই দলের নেতাদের মধ্যেই প্রায়ই দ্বিধা দ্বন্দ্ব বাধে।
সরকারি-বেসরকারি জমিও রেহাই পায় না
অভিযোগ রয়েছে, এমনকি সরকারি-বেসরকারি জমি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন অফিস দখল করে সেখানেও এসব দখলবাজ নেতা ব্যানার-সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ ট্যাগ লাগিয়ে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়, এমনকি মারমুখী আচরণও করে এসব নেতা।
মাদক-চাঁদাবাজিতে আসক্ত নেতারা
স্থানীয়রা বলছে, ব্যানার টানানো আসলে সড়ক ও ফুটপাত দখল বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের অংশ। অনেক নেতার ঘরে বাজার চালানোর সামর্থ্য নেই, অথচ তারা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে ‘বুথ’ হয়ে থাকে। চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন অনেকে, মামলা হয়েছে, এমনকি বহিষ্কারও হতে হয়েছে। তবুও এলাকায় দাপট দেখিয়ে চলছেন তারা।
টাকার উৎস চাঁদাবাজি ও অবৈধ ব্যবসা
ব্যানার-পোস্টার তৈরির খরচ মেটাতে স্থানীয় বৈধ-অবৈধ ব্যবসায়ী, এমনকি মাদক স্পট থেকেও চাঁদা তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফুটপাত দখল, মিটিং-মিছিল, জনসভা, লোক ভাড়া ও গাড়ি ভাড়ার অর্থ জোগাড়েও একই কৌশল ব্যবহার করা হয়। অথচ এই নেতাদের বৈধ ব্যবসার কোনো তথ্য নেই।
এলাকা রণক্ষেত্রের মতো
ফলে রাজনৈতিক ব্যানারবাজির নামে প্রতিদিনই দখলবাজি, চাঁদাবাজি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মাঝে মাঝে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। অথচ জনগণের কোনো সমস্যার সমাধান হয় না—শুধু ব্যানার আর পোস্টারের ছড়াছড়ি বেড়েই চলেছে।
বিএনপি ত্যাগীদের ক্ষোভ
বিএনপি ত্যাগীরা বলছেন, এভাবে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক পোস্টার-ব্যানার ঝোলানো হলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। অনেকেই বিএনপির হেভিওয়েট নেতা আমিনুল হকের ছবি ব্যবহার করছেন, অথচ তার অনুমোদন বা স্বাক্ষর নেই। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—“যারা এসব পোস্টার-ব্যানার লাগাচ্ছে, আমরা তো তাদের চিনি না, তারা আদৌ বিএনপির রাজনীতি করে কি না তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।”
ঢাাক উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-২ নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিন বলেন, “বিদ্যুতের পিলার এবং সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ব্যানার লাগিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে যানবাহনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। আমরা বারবার তাদের পোস্টার ও ব্যানার লাগাতে নিষেধ করছি। যদি তারা না মানে, আমরা সব খুলে ফেলে দেব।”