চাঁদাবাজি, মাদক, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, রাজনৈতিক ছত্রছায়া-সবশেষে বিএনপি নেতার ছায়ায় টিকে থাকা অপরাধ সম্রাটের অবসান শুরু
রাজু আহমেদ | ১৮ জুন ২০২৫ | ঢাকা
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা দীর্ঘদিনের এক অপরাধ সাম্রাজ্যের অবসান শুরু হয়েছে আজ। রূপনগর ও পল্লবী এলাকার চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সরকারি জমি দখল, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বাণিজ্যসহ একাধিক অপরাধের হোতা ‘ময়লা কামাল’ অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
আজ ভোর সাড়ে ৫টায় মিরপুর ১২-এর একটি মদের বারের পাশ থেকে পল্লবী থানা পুলিশের অভিযানে ময়লা কামাল ও তার সহযোগী রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় প্রায় দুই শতাধিক সন্ত্রাসী জড়ো হয়েছিল, বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কথিত ‘ময়লা গডফাদার’ কীভাবে গড়ে তুললো অপরাধ সাম্রাজ্য?
কামালের শৈশব কেটেছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ছেলের জীবনসংগ্রামে। তার বাবা ছিলেন পৌরসভার ময়লা গাড়ির ঠেলাওয়ালা। সেখান থেকে উঠে এসে আজ তার ভোলার গ্রামে কোটি টাকার সম্পদ, মিরপুরে বাড়ি-প্লট, গ্যারেজ, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবসা ও বস্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো দুয়ারীপাড়াকে ‘মাফিয়া হাব’ বানিয়ে তুলেছে।
লোকজনের প্রশ্ন—“একজন পরিচ্ছন্নকর্মীর সন্তান কীভাবে কোটি টাকার মালিক হলো?”
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা অপরাধের বলয়
এই চক্রকে রক্ষা করতেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা। বিশেষ করে ঢাকা-১৬ আসনের সাবেক এমপি ও পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রজ্জব হোসেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান ও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক ভিপি রবিন—সবার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই গোপন সিন্ডিকেট। তাদের সরাসরি নির্দেশনা ও অর্থায়নে ময়লা কামাল ও রায়হান মিছিল, জমায়েত এবং এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বজায় রাখত।
অবৈধ অর্থের ঝর্ণাধারা
দুয়ারীপাড়ায় শুরুতে ময়লা ব্যবসা দিয়ে শুরু করলেও পরে কামাল নিয়ন্ত্রণ নেয় অবৈধ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ, রিকশা গ্যারেজ, ফুটপাত দখল, মাদকের পাইকারি নিয়ন্ত্রণ, বস্তি শাসন ও বিচার-শালিস বানিজ্যের। মাসিক আয় দাঁড়ায় ১৫–১৮ লাখ টাকার বেশি।
পরিচয়ের পেছনে লুকানো বিএনপি নেতা?
সাম্প্রতিক সময়ে ময়লা কামালের মালিকানাধীন গ্যারেজ ও বাড়িগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তার চাচাতো ভাই, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের হাতে। তিনি দুয়ারীপাড়ার ক-ব্লক ও খ-ব্লকে কামালের টিনসেড বাড়িগুলোর ভাড়া আদায় করেন। ঝিলপাড় বস্তির বাড়িগুলোর ব্যবস্থাপনাও তাঁর হাতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন—“ছদ্মবেশী রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধীরা দলগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।”
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাও সালাউদ্দিনকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য
পল্লবী থানার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর কাইয়ুম বলেন, “ময়লা কামালের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ১৬ জুন সকাল তাকেসহ রায়হানকে গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে এনে তার সম্পূর্ণ অপরাধ জাল বিশ্লেষণ করা হবে।”
সাংগঠনিক প্রশ্ন ও ভবিষ্যতের দৃষ্টান্ত
দেশ যখন গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংকটে, তখন কামালের মতো অপরাধীরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করে গড়ে তুলেছে কোটি টাকার সাম্রাজ্য। তার শিকড় এতটাই বিস্তৃত যে, রাজনীতি, প্রশাসন, এমনকি বস্তির ভাড়াটিয়াদের জীবনও ছিল তার করায়ত্ত।
বিনএপি নেতা আমিনুল হকের বক্তব্য
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকের কাছে এবিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।