রূপনগর, ঢাকা | ২০ এপ্রিল ২০২৫
রাজধানীর রূপনগরের দুয়ারীপাড়া এলাকায় কথিত যুবদলকর্মীদের একটি সংঘবদ্ধ গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ভয়াবহ হামলা, জমি দখল এবং রাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করে গ্যারেজ ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এসব তাণ্ডবের শিকার হয়েছেন মোঃ রাব্বী (১৮) নামের এক রাজমিস্ত্রি, যিনি বর্তমানে ডেন্টাল হাসপাতাল, মিরপুর-১৪–তে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
২ এপ্রিল রূপনগর থানায় দায়েরকৃত এজাহারে রাব্বীর মা মোসাঃ ছাবিনা (৪০) জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে গ্যাং সদস্যরা তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মারাত্মকভাবে আক্রমণ করে।
ঘটনাটির বিবরণ:
৯ এপ্রিল রাত ৭:৩০ মিনিটে ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই এলাকায় গার্মেন্টসের সামনের পাকা রাস্তায় রাব্বীকে ঘিরে ফেলে কথিত যুবদলকর্মী মোঃ শাকিল মিয়া (১ নম্বর আসামি) সহ ১২ জনের বেশি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের একপর্যায়ে তারা রাব্বীকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। শাকিল তার গলায় ছুরি দিয়ে কোপ দেন। অন্য আসামিরা ইট দিয়ে মুখে আঘাত করে তার দাঁত, চোয়াল ও মাথায় মারাত্মক জখম করেন। এরপর তারা রাব্বীকে মৃত ভেবে একটি নির্মাণাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে ফেলে দেয়।
স্থানীয়দের সহায়তায় গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরে ঢাকা মেডিকেল এবং শেষে ডেন্টাল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আসামিদের তালিকা (বয়সসহ):
১. মোঃ শাকিল মিয়া (১৭) ২. মোঃ সুমন (১৭)৩. মোঃ ইয়াসিন (১৭) ৪. মোঃ মামলা শাকিল (১৬) ৫. মোঃ সাব্বির (১৮)
৬. সালমান (১৮)৭. মারুফ ওরফে কোকড়া মারুফ (১৮)
৮. রাতুল (১৯) ৯. সুমন ওরফে পিতলা সুমন (৩৫) ১০. মনির ওরফে বাঘা মনির (৩৮) ১১. ফয়েজ হাওলাদার (৪২)
১২. আজাদুর রহমান আজাদ (৪০) সহ আরও ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি।”
পেছনের সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া:
এরা সকলেই কথিত যুবদলের সদস্য, যারা স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘শফিকুল ইসলাম মিল্টনের’ নাম ব্যবহার করে চলে।
এ বিষয়ে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন বলেন, “আমার কোনো কর্মী অপরাধে যুক্ত নয়। যারা অপরাধ করে আমার কর্মী পরিচয় দেবে, তারা অপরাধী। আপনি দেখেন, ১৬ নম্বর আসনে ঘুরে আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন চাঁদাবাজি বা দখলবাজিতে জড়িত কি না। কার আত্মীয়-স্বজন, ভাই বা ড্রাইভার অপরাধে জড়িত, আপনি খুঁজে প্রতিবেদন করেন। আমি হুট করে আসিনি—ছাত্রদল থেকে শুরু করে আজ ৩৫-৪০ বছর ধরে এই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।”
এই গ্যাংয়ের সদস্যরা ৫ আগস্টের পর হঠাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন প্লট দখল করে সেখানে ব্যানার লাগিয়ে নিজেদের ‘আওয়ামী ঘরানার’ পরিচয় দেয় এবং নিরীহ মানুষদের তাড়িয়ে দেয়। দখল করা জমিগুলোর ওপর অটোরিকশার গ্যারেজ বানিয়ে চলে চাঁদাবাজি।
দুয়ারীপাড়ার অলিগলিতে বৈদ্যুতিক খুঁটির মেইন লাইনে রাতে অবৈধ সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ চুরি এবং ভোরে তা খুলে মিটারে লাগানোর ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে।
এছাড়াও, একাধিক চাঁদাবাজ বিএনপি ও যুবদলের পরিচয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ মোল্লা ও ময়লা কামালের অবৈধ সাম্রাজ্য দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। আগামী পর্বে থাকবে বিস্তারিত।
স্থানীয় জনমত ও পরিস্থিতি:
দুয়ারীপাড়ার বাসিন্দারা এসব দখলদার ও গ্যাং সদস্যদের কারণে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যের ছত্রছায়ায় এ গ্যাং এত বড় হতে পেরেছে। এলাকাবাসী প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে ঘাটকদের পরিচয় নিশ্চিত করতে যুবদলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপ করেও তাদের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। অনেকেই বলেন, “ওরা সুবিধাবাদী—যখন যে নেতা দলীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়, তখন তারা সেই নেতার মিছিল-মিটিংয়ে হাজির হয়।”
থানার অবস্থান:
রূপনগর থানায় মামলার অগ্রগতি ও আসামিদের গ্রেফতার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক বলেন, “এখনও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।” এরপর তিনি জানান, জরুরি মিটিংয়ে আছেন—বলে বিস্তারিত পরে জানাবো।
হাসপাতালে রাজমিস্ত্রী রাব্বী
জানাগেছে, আজ ১২ দিন যাবত অসহায় রাজমিস্ত্রী রাব্বি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালে। সন্ত্রাসীদের হামলায় সামনের একটি দাঁত ও মাড়ির চারটি দাঁতসহ চোয়াল ভেঙে গেছে। ১২ দিন ধরে নিজের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রাব্বি। দ্রুত অপারেশন না করালে তার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। অপারেশনের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন, যা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে রাব্বির পরিবার। এদিকে রাব্বির পরিবারের দুশ্চিন্তার শেষ নেই, অথচ সন্ত্রাসীরা আগাম জামিন নিয়ে মামলা তোলার হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অভিযুক্ত এক ব্যক্তি ইতোমধ্যে আগাম জামিন নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে।
পরিবারের দাবি:
রাব্বীর ওপর বর্বরোচিত হামলার বিচার এবং এসব কথিত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা দখলদার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তার পরিবার ও স্থানীয়রা।