রাজু আহমেদ: সোমবার ১৬ মার্চ
ঢাকা, ১৬ মার্চ ২০২৫: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা স্কুল অব লিডারশীপ (SOL-USA)-এর আয়োজনে আজ বিকাল ৩:৩০ টায় রাজধানীর বেইলী রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত হলো ‘নির্বাচন না সংস্কার: বিদ্যমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের দ্বিতীয় পর্ব। সংলাপে দেশের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা, গবেষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিভিন্ন পেশাজীবী এবং তরুণ নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্কুল অব লিডারশীপ-এর কোঅর্ডিনেটর জনাব হুমায়ুন কবীর পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় ও নির্বাহী পরিচালক ড. জামিল আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষিবিদ মো. শামীমুর রহমান, গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি।
সংলাপে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্কুল অব লিডারশীপ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. গোলাম রাব্বানী বলেন,
“সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তবে নির্বাচন জরুরি। অনির্বাচিত সরকারের পরিবর্তে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সংস্কার করা হলে তা অধিক গ্রহণযোগ্য হবে।”
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন,
“দ্রুত নির্বাচন জরুরি, তবে তা যাতে গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে, যাতে স্বৈরাচারী শাসনের সুযোগ সৃষ্টি না হয়।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. এম এম শরিফুল করিম বলেন,
“আগে নির্বাচন, তারপর গণতান্ত্রিক সরকারের মাধ্যমে বৃহৎ সংস্কার করা উচিত। তবে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যেসব সংস্কার প্রয়োজন, তা এখনই করা যেতে পারে।”
বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ ফোরামের সহ-সভাপতি জনাব বেলাল হোসেন বলেন,
“স্থানীয় সরকারের নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হলে ভালো হয়, যাতে জাতীয় নির্বাচনের কোনো প্রভাব স্থানীয় নির্বাচনে না পড়ে।”
ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন,
“সংস্কার দুই ধরনের—দ্রুত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য নির্বাচিত সরকারকেই দায়িত্ব দেওয়া উচিত।”
বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান চৌধুরী বিপু বলেন,
“সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অপরিহার্য।”
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুল আলম বলেন,
“নির্বাচন ও সংস্কার উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সংস্কারের জন্য নির্বাচন বন্ধ রাখা ঠিক হবে না।”
এডভোকেট আমিনুল ইসলাম মনির বলেন,
“সংস্কার চিরকালীন, তবে এখন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই যথেষ্ট।”
অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল শরীফ বলেন,
“সংস্কার জরুরি, তবে তা হতে হবে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের জন্য। নির্বাচন বন্ধ রেখে সংস্কারের জন্য সময়ক্ষেপণ করা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হবে।”
বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী বাশার বলেন,
“বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারই যথেষ্ট।”
মনিরুজ্জামান মনির বলেন,
“সংস্কার হতে হবে সুষ্ঠু ভোটাধিকারের প্রয়োজনে, কোনো নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নয়।”
স্কুল অব লিডারশীপ ইউএসএ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ফয়েজ কাউসার জানান,
“জাতীয় সংলাপের ধারাবাহিকতায় দেশের বিভাগীয় পর্যায়েও এ ধরনের আলোচনার আয়োজন করা হবে, যাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।”
সংলাপে বক্তারা নির্বাচন ও সংস্কারের গুরুত্ব নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা ও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। স্কুল অব লিডারশীপ ইউএসএ ভবিষ্যতেও এ ধরনের সংলাপ আয়োজন অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
