রিমন ও লায়েকুজ্জামান—দুই অভিমানী মৃত্যুর গল্প, যাদের হৃদয়ভাঙা বিদায় সাংবাদিক সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে
(বাংলাদেশ একাত্তর ডটকম)
রাজু আহমেদ | ৩০ জুলাই ২০২৫
সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন সত্যের সৈনিক। একজন সাইদুর রহমান রিমন, অন্যজন লায়েকুজ্জামান। দুজনেই দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে বহু বছর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের দুঃসময়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন—কিন্তু সুসময় এলে অবহেলা আর অভিমানই তাঁদের নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়।
আজ (৩০ জুলাই) দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমন।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তাঁর মৃত্যু নিছক শারীরিক নয়—এ মৃত্যু এক দীর্ঘ অবহেলা, নিঃসঙ্গতা ও অসম্মানজনক প্রস্থান। বহু বছর ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-এ কাজ করার পর হঠাৎ ছাঁটাই। এরপর বহু প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করেছেন—প্রিয় কর্মস্থলের একটি ডাকে ফেরার আশায়। সেই ডাক আর আসেনি।
রিমনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরা বলেন,
“তিনি ছিলেন ঠান্ডা মাথার, সৎ ও সত্যের প্রতি অটল। কিন্তু যেদিন ছাঁটাই হলেন, সেদিন থেকেই তিনি আর আগের মতো ছিলেন না।”
রিমনের মতোই আরেক সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান-এর বিদায়ও অভিমানঘন ও বেদনাদায়ক।
লায়েকুজ্জামান ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)–এর স্থায়ী সদস্য। তিনি কর্মজীবনে দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক সকালের খবর ও দৈনিক কালের কণ্ঠ-এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন।
করোনার সময় কালের কণ্ঠ থেকে হঠাৎ ছাঁটাইয়ের শিকার হন তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। বন্ধুদের কাছে তিনি হতাশা প্রকাশ করতেন—
“প্রতিষ্ঠান গড়েছি প্রাণ দিয়ে, অথচ পুরস্কার হিসেবে পেলাম ছাঁটাই।”
তিনি পল্লবীতে এসে মাসুম, রাজু, তুহিন, জামান, জহিরসহ ছোট ভাইদের বলতেন—
“এই বয়সে কোথাও গিয়ে চাকরির আবেদন করাও লজ্জাজনক।”
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
লায়েকুজ্জামান ছিলেন এক হাস্যোজ্জ্বল, সদালাপী ও আদর্শ সাংবাদিক—যার মৃত্যু সাংবাদিক সমাজে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
সাইদুর রহমান রিমন তাঁকে ‘বড় ভাই’ বলে ডাকতেন। তাঁদের দুজনের জীবন শেষ হয় প্রায় একই কষ্টের পথে—একই অবজ্ঞায়, একই অভিমানে।
আমরা প্রশ্ন রাখি
যাঁরা প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন, তাঁদের প্রস্থান কেন এমন নির্মম হয়? কেন ছাঁটাইয়ের পর সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ায় না প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনগুলো?
এই দুই মৃত্যু কেবল ব্যক্তিগত নয়—এ এক নীরব সাংবাদিক বিদ্রোহের দলিল।
রিমন-লায়েকদের অভিমান যেন আর কেউ বহন না করে—এই হোক সাংবাদিক সমাজের শপথ।


















