সুমন মাস্টার | ঢাকা | ৯ এপ্রিল ২০২৫
ছাত্রহত্যার মতো নৃশংস মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিএনপির একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মিরপুরসহ উত্তর ঢাকা মহানগরের রাজনীতি। দলীয় ভিতরে তীব্র ক্ষোভে ফুঁসছে বিএনপির তৃণমূল নেতারা।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কল্যাণপুর নতুনবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মিরপুর মডেল থানার পুলিশ দল ছাত্রহত্যা মামলার ২৩ নম্বর আসামি মাইনুদ্দিন হাওলাদার ওরফে পিয়াজ মাইনুদ্দিনকে সেখান থেকে আটক করে।
আসামিকে পুলিশের গাড়িতে তোলার পরই মিরপুর ১১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ স্বপন দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে বাধা দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার করে আসামিকে মুক্তির দাবি জানান এবং একপর্যায়ে পুলিশকে উপেক্ষা করে আসামিকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেন।
ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার ঘটনা
প্রাপ্ত ভিডিওচিত্র ও স্থিরচিত্রে দেখা যায়, পুলিশের গাড়ির দরজা খোলা এবং শাকিল আহমেদ স্বপন ও তার অনুসারীদের পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা চলছে। ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিতে দেখা যায়—যা ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে। ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন;
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে শাকিলের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ
গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, “বিএনপি নেতা শাকিল আহমেদ স্বপনের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল পুলিশের হেফাজত থেকে ছাত্রহত্যা মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেয়।”
অস্বীকার করছেন শাকিল, কিন্তু বিশ্বাস করছে না দলীয় নেতারাও
শাকিল দাবি করেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু কাউকে ছিনিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত নই।” তবে তৃণমূল বিএনপি নেতাদের ভাষ্যে এই দাবি হাস্যকর বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তারা বলছেন, দলের কিছু শীর্ষ নেতা অপরাধীদের রক্ষা করতে গিয়ে পুরো দলকে কলঙ্কিত করছেন।
তৃণমূলে বিস্ফোরণ: ‘বিএনপি হয়ে গেছে অপরাধীদের আশ্রয়দাতা’
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, ছাত্রহত্যা, খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগপন্থি নেতাদের বিএনপির ভেতরে জায়গা করে দিচ্ছেন উত্তর মহানগরের কিছু শীর্ষ নেতা। তারা রীতিমতো ঘুষ-উপহার দিয়ে নিজেদের রক্ষা করছেন এবং ইফতার কিংবা উৎসব কেন্দ্র করে এই অপরাধীদের জনসংযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে রূপনগর যুবলীগ নেতা শরিফ মাতবর এবং ছাত্রহত্যার আরেক আসামি শোয়েব হোসেন মুন্নার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠেছে—যারা বর্তমানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে সড়ক ও ফুটপাত হকার, পরিবহনে ব্যাক-মানি, সড়কে বাস পার্কিং, গার্মেন্টস, বস্তি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণসহ চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া: ‘প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, “ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে নেতাকর্মীরা বলছেন—এটা আর রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটা আইন ও নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।
আইন কি এখন দলীয় সুবিধার হাতে বন্দি?
সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে—রাজনৈতিক পরিচয় কি এখন আইনের চেয়েও বড়? ছাত্রহত্যার আসামিকে প্রকাশ্যে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা যদি ধামাচাপা পড়ে যায়, তবে জনগণ কার ওপর আস্থা রাখবে?
দেশজুড়ে যখন ন্যায়বিচারের দাবি উচ্চকিত, তখন একদলীয় সুবিধা ও অপরাধীদের রক্ষায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের এই ভূমিকা গণতন্ত্র ও নৈতিকতার জন্য সরাসরি হুমকি—এমনটাই মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।