নিজস্ব প্রতিবদেক: ২৫ মে ২০২৫
ঢাকার পল্লবীর মিল্লাত ক্যাম্পে মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এক নাটকীয় মানববন্ধনের আয়োজন করে স্থানীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের একটি অংশ। রবিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে মুখর ছিল মাদকবিরোধী স্লোগান ও কথার ফুলঝুরি। তবে মানববন্ধন শেষে ফাঁস হয় ভয়ঙ্কর এক মাদক-চাঁদাবাজির অজানা কাহিনি।
মানববন্ধনে যুবলীগ নেতা পরিচয়ধারী বিহারী পাপ্পু ঘোষণা দেন, “আমি জীবনে মাদকের টাকা খাইনি। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে জুতার মালা গলায় দিয়ে ঘুরব। ক্যাম্পে কোনো মাদক বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।” তার পাশে ছিলেন যুবলীগ, বিএনপি, স্থানীয় বাসিন্দা ও পল্লবী থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম।
অবশ্য, পাপ্পুর অতীত রাজনৈতিক পরিচিতি একে পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ করে। হত্যা মামলায় কারাবন্দী পল্লবী থানা যুবলীগ নেতা বিহারী আড্ডুর ডান হাত পাপ্পুর যুবলীগের মিটিং-মিছিলসহ একাধিক ছবি এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। মিরপুর ১১, নান্নু মার্কেট এলাকায় ছাত্রজনতার উপর হামলা ও নিপীড়নের ঘটনায় আড্ডু-পাপ্পুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের দলবদ্ধ ছবি এসব অভিযোগের বাস্তবতা তুলে ধরে। সেই পাপ্পু এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে মাদকবিরোধী নাটক করছে।
মানববন্ধনের পরপরই নাটকীয় মোড় নেয় পরিস্থিতি। ক্যাম্পের ভেতর থেকে শত শত নারী-পুরুষ বেরিয়ে এসে জনসম্মুখে চিৎকার করে বলেন, “পাপ্পু প্রতি মাসে পুলিশের নাম করে আমাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেয়। এবার কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পাঁচটি গরুর দাম দাবি করেছে। টাকা না দেওয়ায় মানববন্ধনের নাটক সাজিয়েছে।”
অভিযোগ আরও ভয়াবহ। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, পাপ্পুর বোন নিজেই একজন মাদক ডিলার, আর পাপ্পু পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। টাকা না পেলে পুলিশের সহায়তায় নিরীহদের হিরোইনের মামলায় ফাঁসানো হয়। পাপ্পুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “আমি জানি না কে যুবলীগ করে, কে মাদকের টাকা নেয়। আমি তো স্রেফ রাস্তায় যাচ্ছিলাম, দেখে কিছু কথা বলেছি।” এক প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, “আগে কেউ যুবলীগ করতো, এখন বিএনপিতে গেছে—তাদের দায় আমি নেব কীভাবে?”
সূত্র জানায়, মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, আনোয়ারি, রাজিয়া, সায়মা, সাব্বো, সালোনি, নাটা সুমন, শাহানার একাধিক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অভিযোগ উঠেছে—তাদের কাছ থেকে চাঁদা না পাওয়াতেই পাপ্পু এই ‘মাদকবিরোধী’ নাটক সাজিয়েছেন।
স্থানীয়দের মন্তব্য, যেখানে মাদকবিরোধী আন্দোলনের মুখোশে নাটক চলে, সেখানে লুকিয়ে থাকে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রতারণার গন্ধ। প্রশ্ন উঠছে—এই ‘মানববন্ধন’ কি মাদকের টাকায় ঈদের গরু কেনার চেষ্টা? এবার দেখার পালা, প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়।