বৃহস্পতিবার , ২০ জুন ২০১৯ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ সংবাদ
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সাহিত্য

খাদ্যে ভেজালকারীদের নির্মূল করতেই হবে

প্রতিবেদক
bangladesh ekattor
জুন ২০, ২০১৯ ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

ড. এম এ মাননানঃ
মাত্র এক লাখ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার বিশিষ্ট ষোলো কোটি ছেচল্লিশ লাখ লোকের দেশে এমনিতেই আছি হাজারও সমস্যা নিয়ে। প্রায় ৫ কোটি লোক থ্যালাসেমিয়ায় এবং আরও প্রায় ৫ কোটি (৩০ শতাংশ) ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। ৫০ শতাংশ মানুষের লিভারে ন্যাশ (চর্বি জমার ফলে সৃষ্ট প্রদাহ) রয়েছে।

শহরাঞ্চলে হরেকরকম দূষণের ছোবল- বায়ূ দূষণ, পানি দূষণ, নদী দূষণ, আলো দূষণ, শব্দ দূষণ, কৃষিজমিতে ভারি ধাতুর দূষণ, চারদিকে সব মিলিয়ে পরিবেশ দূষণ।

ইদানীং শোনা যাচ্ছে, পাশের বঙ্গোপসাগরটাও নাকি প্লাস্টিক দূষণে আক্রান্ত অন্য সব সাগর-মহাসাগরের মতো। শহরের খাল-নালাগুলো অনেক আগেই হাওয়া। নদীগুলো ধুঁকে ধুঁকে মরছে শিল্পবর্জ্য আর দখলের অনাচারে।

গ্রামে-শহরে সর্বত্র আরও আছে বহুবিধ বিপত্তি। নারী-শিশু নিপীড়নের আতঙ্ক, মিডিয়াতে প্রায় প্রতিদিনই কিশোরী-তরুণী-গৃহবধূ ধর্ষণের ভয়াবহ খবর, হাতুড়ে-বৈদ্য-ওঝার অপচিকিৎসা আর অপঘাতে মৃত্যু, নীরব চাঁদাবাজি, প্রকাশ্য মাস্তানি, ঘুষ-দুর্নীতি নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

চালের বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, কালো কাচের ভয়ংকর মাইক্রোবাসে সক্রিয় অপহরণকারীচক্র। গাড়ির চাপায় পিষ্ট হচ্ছে পথচারী আর সংঘর্ষে মরছে গাড়িযাত্রী। গাড়ি আর মোটরসাইকেলের বুস্টারজনিত শব্দ-অত্যাচার, সঙ্গে মানসিক যন্ত্রণা তো রয়েছেই। ফুটপাত দখলে, পথচারী রাস্তায়। ভাঙছে সংসার আর যৌথ পরিবার।

শহরে-গ্রামে তালাকের হিড়িক, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য-সম্পর্ক ভঙ্গুরতার মুখোমুখি। যৌতুকের ছোবল তো আছেই। দাম না পেয়ে ধান চাষ ছেড়ে চলে যাচ্ছে কৃষক অন্য কিছুতে, আর লোকসান দিতে দিতে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সোনালি আঁশের দেশের পাটকলগুলো, বেকার হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য শ্রমিক। টেনশনে চলছে জীবন।

উন্নয়ন হচ্ছে চারদিকে; কিন্তু অন্য সমস্যাগুলোর দিকে মনে হয় তাকিয়েও দেখছে না কেউ। একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যার নজরে এলে বাপের মতোই দরাজ দিল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সমস্যা সমাধানের পথে।

বিভিন্ন সংস্থায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা এতে কি একটুও লজ্জায় পড়েন না? কামনা করি, তাদের দু’চোখ থেকে অচিরেই লজ্জার মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ুক আর সে বৃষ্টির পানিতে দেশবাসী কৃতজ্ঞচিত্তে অবগাহন করুক।

কিন্তু এখন তো জীবনটা বাঁচিয়ে রাখাই হয়ে উঠেছে কঠিন, জীবন-বাঁচানোর অপরিহার্য উপাদান খাদ্যপণ্যে ভেজালের কারণে। আমে কার্বাইড, তরমুজে স্যাকারিনের ইনজেকশন, আনারসে স্পিরিট, টসটসে লিচুতে স্পিরিট-রং, ডাবে বেহুঁশ করার ইনজেকশন, পচা আটাসহ চিনি আর কাপড়ের বিষাক্ত রং ও ফিটকিরি মিশিয়ে তৈরি গুড় আর মেয়াদোত্তীর্ণ আটার সঙ্গে চিনি-ফালাডি পাউডার-ভিনেগার-কাপড়ের রং ও বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি ট্যাং আর পোড়া মবিলে ভাজা জিলাপি ইত্যাদি জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে।

গুঁড়া মসলায় যে কত রকমের ভয়ংকর জিনিস মেশানো হয়, তা জানলে কেউ বাজারের গুঁড়া মসলা খাবেই না। এসব ভেজাল খাদ্যদ্রব্য খাওয়া মানেই কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্ডিস আর ক্যানসারকে স্বাগত জানান।

শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। অথচ তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। ভেজাল-নকল খাদ্যের কারণে শ্বাসকষ্ট, বমি, চর্মরোগ, শরীরে দ্রুত পানি চলে আসাসহ বহু রোগে ভোগে শিশুরা। শিশুদের প্রিয় আইসক্রিম তৈরি হয় এমন কিছু চিহ্নিত কারখানায় যেগুলো পয়জনিং কারখানারই নামান্তর- এগুলোতে আইসক্রিমে মেশানো হয় লিভার-কিডনি বিধ্বংসী আর ক্যানসার সৃষ্টিকারী ঘনচিনি, পামঅয়েল আর রং। বাড়িঘর নির্মাণের উপকরণ আর কাঠ জোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত বর্ণহীন ঝাঁজালো গন্ধের ফরমালডিহাইড সহকারে তৈরি হচ্ছে বেবিশ্যাম্পু।

যে তরল দুধ শিশুরা খাবে তা তৈরি করা হয় শ্যাম্পু আর রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে। মানহীন পানিতে বাজার সয়লাব। ওয়াসার পানির ওপর তো ভরসাই নেই নগরবাসীর। ভেজাল আর নকল খাদ্য থেকে ধীরলয়ে ঢুকছে বিষ মানুষের শরীরে আর সবার অজান্তেই নিঃশেষ করে দিচ্ছে জীবনীশক্তিসহ নারীদের প্রজনন ক্ষমতা।

শুধু মানুষের খাদ্য নয়, পশুপাখির খাদ্য আর ওষুধেও ভেজাল। অনুমোদনহীন কারখানায় তৈরি হচ্ছে কেমিক্যাল আর বিভিন্ন সলিউশন মেশানো পোলট্রি-ফিশারি-গবাদিপশুর ভিটামিন এবং অ্যান্টিবায়োটিক।

ভেজালের পাশাপাশি উপদ্রব রয়েছে আরও ক্ষতিকর বিষয়- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত, পণ্যের মোড়কে ওজন, মূল্য, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না দেয়া, ওজনযন্ত্রের ভেরিফিকেশন সনদ না গ্রহণ করা ইত্যাদি।

বিষযুক্ত এসব ভেজাল খাদ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি। গোটা বাংলাদেশ এখন ভেজাল খাদ্যের ভাগাড়। ভেজালের মহামারী চারদিকে। কারা এসব করছে? এরা অসাধু শিল্পপতি, উৎপাদনকারী, কৃষক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, মজুদদার আর পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। ভেজাল দিচ্ছে বা করছে তারা অতি মুনাফার লোভে, রাতারাতি ধনী হওয়ার বিকৃত আকাক্সক্ষায়, সমাজে প্রতাপশালী হওয়ার নীচ প্রত্যাশায়।

ভেজালের রাজ্যে আরেক সংযোজন ভেজাল টাকার ছড়াছড়ি। খাদ্যে ভেজালের মতো জাল টাকার ‘ব্যবসায়ীরা’ও ভয়ংকর অপরাধী, এরা অর্থনীতির পেটে ছুরি চালায় নির্বিকার চিত্তে।

খাদ্যে ভেজাল দিয়ে, নকল পণ্য তৈরি করে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধসহ বিভিন্ন খাদ্যে নিুমানের উপাদান মিশিয়ে এবং প্রায় সব রকমের খাদ্যদ্রব্যে কীটনাশক আর ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এক বিষাক্ত খাদ্য পরিবেশ। প্রায় অর্ধশত দেশ ঘুরে কোথাও দেখিনি এমন ভীতিকর খাদ্য-সমাবেশ।

এমনকি সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত, হানাহানিরত দেশগুলোতেও নয়। এমনটি কেন হচ্ছে আমাদের এ সোনার বাংলায়? কারণটি বিজ্ঞজনদের অজানা, এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।

দেশবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা-সহযোগিতায় সরকার অর্থনীতির ক্ষেত্রে অর্জন করেছে অনেক, বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনে। ধান, মাছ আর সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে।

দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও সঠিক মূল্য না পাওয়ায় উৎপাদকদের রাস্তায় দুধ ঢেলে দিয়ে প্রতিবাদ করতে হয়। কারণ কী? মূল কারণ দুধে ভেজাল। ভেজালের আশঙ্কা আর ক্ষতির ভয়ে জনগণ দুধ কিনতে চায় না।

ভেজালকারীরা তো সব অর্জন ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে আর একই সঙ্গে মলিন করে দিচ্ছে সরকারের ভাবমূর্তি। অর্জনের কোনো দাম থাকে না যদি সে অর্জন জনগণের কোনো কাজে না লাগে। উন্নয়নের কারণে আয় বেড়ে কী হবে যদি না সে আয় দিয়ে নিরাপদ খাদ্য কেনা যায়!

ভোক্তারা এখন চোখ দিচ্ছে দেশি পণ্য ছেড়ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দিকে, বিশেষ করে শিশুখাদ্যে। নির্ভর করতে চাইছে বিদেশি পণ্যের ওপর। প্রশ্ন থেকে যায়, আমদানিকৃত পণ্যের মানের ব্যাপারে কোনো সত্যায়ন করছে কি কোনো মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান?

বিএসটিআই’র তালিকাভুক্ত ২০টি আমদানিকৃত খাদ্যপণ্য ব্যতীত অন্যান্য আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের গুণগত মান কোনো প্রতিষ্ঠান যাচাই করে দেখছে বলে জানি না। এর জন্য আইনি কাঠামো যেমন নেই, তেমনি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানও নেই।

যদি থাকত তাহলে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর আমদানিকৃত শিল্পলবণ (সোডিয়াম সালফেট) খাবার লবণ হিসেবে বাজারে দেদার বিক্রি হতো না। বাংলাদেশের খাদ্যপণ্য উৎপাদকদের অন্য দেশে পণ্য রফতানি করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় মান মেনে পণ্য উৎপাদন করতে হয়।

সে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা পণ্যগুলোর মান নিয়মিত যাচাই করে এবং মানের ব্যত্যয় ঘটলেই ব্যবস্থা নেয় সঙ্গে সঙ্গে। আমাদের দেশে এরকম ব্যবস্থা থাকবে না কেন?

বাঙালির সামর্থ্য সীমিত বটে, তবে আকাক্সক্ষাও বিপুল নয়। পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ভালো মানের খাবার কিনে খেতে চাওয়া একটি স্বাধীন দেশের নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এ দেশে এ অধিকারের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে কারা? এক কথায় সবাই বলবে, খাদ্যপণে-ওষুধে ভেজালকারীরা।

এ ভেজালকারীরা কারা? এরা বিকৃত মানসিকতার একশ্রেণীর উৎপাদনকারী। এরা অন্যায় করে আবার প্রভাব আর অর্থ খাটিয়ে নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায়। এদের মতো সমান অপরাধী তারাও, যারা ঘুষ নিয়ে আর প্রভাবিত হয়ে এদেরকে ভেজাল দেয়ার মতো পাপের কাজে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা করে।

পাপ করে দু’পক্ষই, সুতরাং শাস্তিও হতে হবে দু’পক্ষেরই, সমানে সমান। এরা সবাই খুনি। লোকচক্ষুর আড়ালে এরা মারছে অগণিত মানুষ, খাদ্যে-ওষুধে ভেজাল দিয়ে আর নিুমানের পণ্য বিক্রি করে।

ভেজাল প্রতিরোধের জন্য রয়েছে অনেক আইন (ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, নিরাপদ খাদ্য আইন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ইত্যাদি) কিন্তু নেই শক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা। পণ্যদ্রব্যের মান পরীক্ষা ও মান নিশ্চিতের জন্য সিটি কর্পোরেশন, খাদ্য অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও বিএসটিআইসহ রয়েছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তো আছেই; কিন্তু এগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। ভেজালের রাজ্যে প্রভাবশালীদের পদচারণার কারণে ভেজাল আর নকল পণ্যের বিস্তার বন্ধের জন্য প্রয়োজন ‘মজবুত’ রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সদিচ্ছা আর সুষ্ঠু পরিকল্পনা।

একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির পর বানাতে হবে বার্ষিক পরিকল্পনা। লক্ষ্য হতে হবে সুস্পষ্ট। লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রণয়ন করতে হবে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশল। কৌশলগুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে মাঠে নামতে হবে বিস্তারিত ‘বাস্তবায়ন ও মনিটরিং পরিকল্পনা’ নিয়ে। থাকতে হবে সঠিক সুপারভিশন প্ল্যান।

আর বাস্তবায়নের জন্য তৈরি করতে হবে নিবেদিতপ্রাণ একদল চৌকস প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী, যারা চাকরির খাতিরে চাকরি করবে না, কাজ করবে দেশসেবার মনোবৃত্তি নিয়ে, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে থাকবে প্রফেশনালিজমের ছোঁয়া। একই সঙ্গে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা।

জনগণ ভেজাল সম্পর্কে, এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হলে এবং তাদের পণ্য সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি পেলে এমনিতেই ভেজাল পণ্য এবং এগুলোর উৎপাদকদের বয়কট করবে, পণ্য কেনা বন্ধ করে দেবে।

জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সর্বোপরি থাকতে হবে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। যথাবিহিত সুশিক্ষার বিষয়টিকেও আমলে আনতে হবে। সঠিক ও সুশিক্ষার প্রয়োজন উৎপাদকদের, ভোক্তাদের আর নিয়ন্ত্রকদের। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে এর কোনো বিকল্প দেখছি না।

স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে ভেজালবিরোধী অভিযান কিছুটা সুফল বয়ে আনে ঠিকই; কিন্তু এ ফল দীর্ঘমেয়াদি হয় না। এবারের রমজানে ভেজালের উপদ্রব থেকে জনগণকে রক্ষার লক্ষ্যে জোরেশোরে চলেছে অভিযান। তবে ভেজালকারী আর নকলবিদরা বোঝে কয়েক দিন পর এসব ‘হাঙ্গামা’ আর থাকবে না।

তখন আবার কোমরে গামছা বেঁধে নামবে এরা মাঠে, ভেজাল-নকলে সয়লাব করে দেবে বাজার। তাই আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার রমজানে শুরু হওয়া অভিযান সারা বছর ধরেই চলমান রাখবে।

ম্যাজিস্ট্রেটসহ যেসব কর্মকর্তা ভেজালবিরোধী অভিযানে যুক্ত থাকবেন, তাদের যথাযথ প্রটেকশন ও নিরাপত্তা থাকতে হবে এবং কেউ রাজনীতির নামে কিংবা সামাজিক প্রভাব খাটিয়ে যেন অভিযানে হস্তক্ষেপ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আদালতের আদেশ পালনে যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা গড়িমসি করে, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্যকারীদের পার পাওয়ার সুযোগ যেন না থাকে।

যেসব উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ভেজাল পণ্যের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে, তাদেরকে জনগণের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, তারা আর এরূপ জঘন্য অপরাধ করবে না।

আমাদের আস্থা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর, যিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন- ‘খাদ্যের মান ফিরে না আসা পর্যন্ত ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।’ জনগণ আছে তার সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা অতীতে যা বলেছেন, তা করে দেখিয়েছেন। তিনি নির্ভরযোগ্য, তার কথার ওপর ভরসা করা যায়।

ড. এম এ মাননান : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট; উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ - রাজনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত