বৃহস্পতিবার , ২৪ জুলাই ২০২৫ | ৩রা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আওয়ামীলীগ
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বি এন পি
  10. বিনোদন
  11. বিশেষ সংবাদ
  12. রাজধানী
  13. রাজনীতি
  14. লাইফস্টাইল
  15. শিক্ষা

কোটিপতি স্কুলে কোটি টাকার অনুদান, গরিবের প্রাণ গেলে মেলে কি এমন সহানুভূতি?

প্রতিবেদক
বাংলাদেশ একাত্তর
জুলাই ২৪, ২০২৫ ১২:৩০ অপরাহ্ণ

কোটিপতি স্কুলে কোটি টাকার অনুদান, গরিবের প্রাণ গেলে মেলে কি এমন সহানুভূতি?

নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | প্রকাশ ২৪ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় শিশুশিক্ষার্থীদের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং অনেকের দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার ঘটনায় গোটা দেশ শোকাহত। হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করা পুড়ে যাওয়া শরীরগুলোর আর্তনাদ যেন গোটা জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

একই সপ্তাহে রাজধানীর পল্লবীর কসমো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ভয়াবহভাবে দুর্বল।

বৈষম্যমূলক সহানুভূতিতে ক্ষুব্ধ জনতা

মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা এবং আহতদের জন্য মাত্র এক কোটি টাকা অনুদানের খবরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—
“যে শিশু বেঁচে থেকেও আগুনে ঝলসে গেছে, সারাজীবন কষ্ট ভোগ করবে, তার জন্য এক কোটি, আর যারা মারা গেছে তাদের পরিবার পায় কোটি কোটি টাকা? এই বৈষম্য কেন?”

একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“রিকশাওয়ালার সন্তান মারা গেলে রাষ্ট্র কেবল কাফনের কাপড় দেয়। অথচ কোটিপতির সন্তান মারা গেলে কোটি টাকার অনুদান, শোকপ্রদর্শনের মহড়া চলে! এটা কি ন্যায়ের রাষ্ট্র?”

সাংবাদিকদের বাধা: কী আড়াল করা হচ্ছে?

দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র জানতে সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে গেলেও সেনা সদস্যদের বাধার মুখে পড়েন।
এশিয়ান টেলিভিশনের সাংবাদিক শেখ মিন্টু বলেন,
“আমি লাইভ করতে গেলে এক সেনা সদস্য এসে বুকে ধাক্কা দেন এবং বলেন ভিতরে ঢোকা যাবে না। আমি বললাম ভাই, ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না।”

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে—সাংবাদিকদের সরিয়ে রেখে কী আড়াল করা হচ্ছে?

‘নায়ক’ না নাটক?—পাইলটের মৃত্যু নিয়ে রহস্য

প্রথমদিকে বলা হয়, পাইলট শিশু শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে ‘পুড়ে ছাই’ হয়ে যান—তাঁকে ‘নায়ক’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

কিন্তু পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও, যেখানে দেখা যায়—একজন পাইলটকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে সেনা সদস্যরা স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছেন।

এরপর সরকারের ভাষ্য পরিবর্তন হয়ে জানানো হয়—
পাইলট জীবিত উদ্ধার হলেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এই তথ্য নিয়ে জনমনে গভীর প্রশ্ন:

যদি পুড়ে ছাই হয়ে যান, তাহলে জীবিত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তি কে?

হাসপাতালে চিকিৎসার তথ্য, সময়, মেডিকেল রিপোর্ট গোপন কেন?

পাইলট যদি উদ্ধার হন, তাহলে তাঁকে বাঁচাতে যথাযথ চেষ্টা করা হয়েছিল কি?

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাইলট প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেন এবং প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট পর তাঁকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
তবে পরে শনাক্ত হওয়া ‘মৃতদেহ’ আসলে কার—এ নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।

লাশের সংখ্যায় গড়মিল!

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়—দুর্ঘটনার পর অন্তত ৮–১০টি দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
কিন্তু সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে বলা হচ্ছে।

একজন অভিভাবক প্রশ্ন তোলেন—
“আমার বাচ্চা স্কুলে গিয়েছিল, এখন তাকে পাচ্ছি না। তালিকায় নেই, দেহ শনাক্তও হয়নি। তাহলে সে কোথায়?”

মানুষ বলছে—ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে বলা হচ্ছে।

পুরনো বাতিল যুদ্ধবিমান উড়লো রাজধানীর আকাশে—কে নেবে দায়?

এই দুর্ঘটনার সূত্র ধরে আরও এক ভয়াবহ প্রশ্ন উঠে এসেছে—
চীনের বাতিল করা পুরনো যুদ্ধবিমান কীভাবে জনবহুল রাজধানীর আকাশে উড়লো?

কার অনুমোদনে এই বিমান ব্যবহৃত হলো?

জনবহুল এলাকায় এমন উচ্চ-ঝুঁকির উড়ান কি দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত?

বিমানবাহিনীর প্রধান ও সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহি দাবি করছেন নাগরিকরা।
তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না কেন—এই প্রশ্নও উঠে এসেছে।

একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন—
“ফিটনেসবিহীন যুদ্ধবিমান শহরের মধ্যে চালানো মানে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এর দায় কেউ এড়াতে পারে না।”

নিরাপত্তাহীন রাষ্ট্রব্যবস্থায় কতটা নিরাপদ সাধারণ মানুষ?

সুশ্রী বিবৃতি, ফুল দিয়ে শোকপ্রকাশ আর মুখস্থ তদন্ত কমিটি—এই চেনা প্যাটার্নে চলছে ঘটনা ধামাচাপার আয়োজন।
কিন্তু জনতা আর এই নাটক মানতে রাজি নয়।

একজন নাগরিক বলেন,
“রাষ্ট্র যদি কেবল ধনীদের জন্য সহানুভূতি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে, তাহলে গরিবদের জন্য এই রাষ্ট্র কী দেয়?”

এখন জরুরি যেসব পদক্ষেপ:

✅ প্রতিটি স্কুলে বাধ্যতামূলক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র
✅ নিয়মিত ফায়ার সেফটি ড্রিল ও প্রশিক্ষণ
✅ স্কুল ভবনের আলো-বাতাস চলাচল নিশ্চিতকরণ
✅ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রিত এলাকা ঘোষণা
✅ অবৈধ পার্কিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণ

জনগণের প্রশ্ন—রাষ্ট্র কার?

বারবার ভুল সিদ্ধান্ত, তথ্য গোপন, ক্ষমতার অপব্যবহার আর দায়হীনতার কারণে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে।
এই প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে—
এই রাষ্ট্র কি সবার, না কেবল ধনীদের?

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন”, শোক নয়, এবার জবাব চাই!

কার গাফিলতিতে শিশুরা আগুনে পুড়লো?
কার সিদ্ধান্তে বাতিল যুদ্ধবিমান শহরের আকাশে উড়লো?
কার আদেশে তথ্য লুকানো হলো?

এসব প্রশ্নের জবাব চাই এখনই।

সর্বশেষ - আইন ও আদালত

আপনার জন্য নির্বাচিত