শনিবার , ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আওয়ামীলীগ
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বি এন পি
  10. বিনোদন
  11. বিশেষ সংবাদ
  12. রাজধানী
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সাহিত্য

বাস্তবতা, অনৈতিকতা ও ভাবনা

প্রতিবেদক
bangladesh ekattor
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০ ৪:৩০ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ একাত্তর.কমলেখক: নিপুল কুমার বিশ্বাস।

বর্তমান মহামারীর এই সময়ে মানবজাতীর এই বিচরণ ভুমিতে, সৃষ্টির সেরা জীব আজ চরম মুহুর্ত অতিক্রম করছে। এই দুর্যোগে শিশু থেকে বৃদ্ধ, ধনী থেকে গরীব, শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক, ক্ষুদ্রব্যবসায়ী হোক আর শিল্পপতি হোক, পরিশ্রমী হোক আর অলসপ্রকৃতির হোক সবাইকে ভোগান্তি দিয়েছে এই মহামারী।

একদিকে চলছে মানুষের মানসিক দুশ্চিন্তা, অন্যদিকে জেকে বসেছে অর্থনীতির দুরবস্থা। কিছু মানুষের মননে সুস্থ্য থেকে বেঁচে থাকার চিন্তা, কিছু মানুষের জীবনে খেয়ে পরে জীবনটা পার করার চিন্তা। আর্ন্তজাতিক উদারাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ এর গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে দেশে করোনা ভাইরাস মহামারীতে লকডাউনের কারনে ৯৬ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমেছে এবং ৯১ শতাংশ নিজেদের অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল মনে করছে।এই চরম মুহুর্তে কিছু লোক পরিবার-পরিজন নিয়ে গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, কেউ পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে নিজে ম্যাচে উঠে খরচ বাঁচিয়ে গ্রামের পরিবার পরিজনের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছে।

করোনা মহামারীতে খোদ মার্কিন মুল্লুকে বিরাজ করছে দুর্ভিক্ষাবস্থা। করোনার তান্ডবে স্বল্প ও মাঝারি আয়ের পরিবারের পক্ষে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। পঁচিশ থেকে ত্রিশ মাইল গাড়ি চালিয়েও অনেকে ত্রাণের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। গাড়ী থাকলেই মনে করার কারণ নেই খাদ্য কেনার অর্থ আছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে এ রকম শিরোনামে প্রকাশ হয়েছে তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ভারতের সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই) নামের একটি পরামর্শক সংস্থার পরিসংখ্যানে করোনা মহামারীর মধ্যে গত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাসে ভারতের প্রায় দুই কোটি দশ লক্ষ মানুষ বেতনভুক্ত চাকুরিজীবি কাজ হারিয়েছেন। বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক প্রধান রর্বাট জোয়েলিক আশঙ্কার কথা বললেন ১০০ বছর আগের অবস্থায় ফিরতে পারে বিশ্বঅর্থনীতি। চাকুরীর বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে।

বর্তমান বাস্তবতায় অধিকাংশ অফিস তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর কিছু অংশ নিরবে ছাঁটায় করছে অথবা স্বেচ্ছায় ছুটিতে রেখেছে। আবার সরকারি বেসরকারি কোন চাকুরির নিয়োগ প্রকাশ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা ছেলেগুলি ঘরে বসেই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে। জীবনের এতোগুলি বছর পার করে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে দীর্ঘ লকডাউনের মাঝেই অনেকের সরকারি চাকুরির নির্ধারিত বয়স পার হয়ে যাচ্ছে।পারিবারিক কোলহের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ যেমন বৃদ্ধিপাচ্ছে, সাথে আত্নহত্যার প্রবনতাও বেড়ে চলেছে। শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। দীর্ঘমেয়াদে বৈদেশিক শ্রমবাজারের দরজা বন্ধ হওয়ার আশংকাও দেখা দিয়েছে।

চাকুরি হারিয়ে দেশে ৮৫ হাজার শ্রমিক। আটকে থাকা ৬ লক্ষ ২৪ হাজার শ্রমিকের মধ্যে কর্মস্থল ফিরেছে মাত্র ১০ হাজার , মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে অস্থিরতা। এমন একটা প্রেক্ষাপটে রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড, হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি, বিনোদন কেন্দ্র, পিকনিক স্পট ব্যবসা বন্ধ। শপিং মল ও শাড়ি কাপড়ের দোকানে মানুষ যায় না। কিন্ডার গার্ডেন, কোচিং সেন্টার, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত টিউশনি সমস্ত কিছু আজ কার্যত বন্ধ। এর মধ্যে সরকার বেসরকারি স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনেক নির্দেশ, আদেশ প্রদান করেছে। টিউশন ফিস মাফকরা, জরিমানা না নেওয়া কিন্তু কে শোনে কার কথা। যারা ঢাকা শহরে আছে, ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজ বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করাছেন, সেটা খ্যাতমানা হোক আর অখ্যাত হোক করোনা পরবর্তী যদি আর্থিক লেনদেন করতে যান তাহলে বুঝবেন কি উদারতা দেখাছেন প্রতিষ্ঠান গুলি। নিয়মিত ক্লাসের সময় টিউশন ফিসের সাথে রিপিয়ার ও মেইনটেন্যান্স চার্জ, আইসিটি চার্জ, আয়া-বুয়ার চার্জ , পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চার্জ, অমুক ফিস, তমুক ফিস নেওয়ার প্রচলন ছিল, করোনার ৫-৬ মাস আপনার ছেলে-মেয়ে স্কুল কলেজে ক্লাস করাতো দূরের কথা বাসা থেকে বেরই হয়নি তারপরও সেই চার্জগুলি বলবদ রেখেছে নির্দ্ধিধায়। কিন্তু এগুলি কেন দিতে হবে তা বোধগম্য নয় অভিভাবকদের। দুর্যোগের সময় বন্যায় ডুবে যাওয়া এলাকায় একটি গাছে যদি সাপ, বেজি, কুকুর, বিড়ালও থাকে সবগুলি প্রাণী ঐমুহুর্তে সর্বচ্ছ সহনশীল ও সহমর্মীতায় বাস করে ।

আমরা সৃষ্টির সেরা জীব পারলাম না দুর্যোগে সৎ থাকতে, উদারতা দেখাতে, মানুষের প্রতি মানুষের যে কর্তব্য সেটা পালন করতে। দুর্নীতি পরায়ন লোকগুলি চোখ বুজে নিজের মতো করে দুর্নীতি করে চলেছে। একদিকে ধর্মচর্চা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে অন্যদিকে ঘুষ, দুর্নীতি আর অনিয়মের মাত্রা লাগামহীন ভাবে করে চলেছে। দুর্যোগের মধ্যে কে কখন মারা যাবে, কয়দিন বাঁচবে, অফিস থেকে বাড়ি পৌঁছাবে কিনা তার ইয়ত্তা নেই কিন্তু অনিয়মের অনৈতিকতা থেকে একচুলও টলেনি। কেউ ক্ষমতার দাপোট দেখিয়ে চলেছে তো কেউ শরীর দেখিয়ে কাজ হাসিল করে যাচ্ছে। এখন আর কেউ, অধমকে দেখে উত্তম হওয়ার চেষ্টা করে না, বন্ধুদের কথা চিন্তা করে নিজের জীবন উৎসর্গ করার কথাও ভাবে না। আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁচ্ছে গেছি, বড় সাহেবের দুশ্চরিত্রের কথা ভেবে ছোট সাহেব যেমন উজ্জীবিত হয়। ডিআইজির বির্তকিত কান্ড দেখে ক্যাসিনোশিল্পের রমরমা ব্যবসা হয়।

কর্তাব্যক্তিদের ঘুষের লেনদেনে ব্যাংক ডাকাতিরা টাকা নিয়ে কানাডায় বেগমগঞ্জ বানায়। বসের অনিয়মে কেরানীর টিকিট পাওয়া ভার। আসলে “সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন বাণিজ্যিক হয়ে যায়, আর কাউকে শরীর দেওয়াটা যখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়ায়” তখন আর নীতি নৈতিকতা বলে কিছু থাকেনা। আসলে কাউকে প্রশ্ন করলে সবাই সবকিছু বোঝে কিন্তু বুঝেও যেন অবুঝের আচরণ করাটাই একমাত্র শিক্ষা। মৃত্যুর সময় সাথে যে কিছু যাবে না, পাবে কেউ সাড়ে তিন হাত জায়গা, কারো হবে চিতার আগুনে সাঙ্গ পার, তবুও যেন দুর্নীতিকারীরা চিন্তাহীন নির্বিকার । তাইতো তাদের উদ্দেশ্যে বিজয় সরকারের গানের সুরে বলতে হয়-“হোক না কেন যতবড় রাজা জমিদার/ সুন্দর নারী, টাকা-বাড়ি, ঘড়ি টেনডেস্টার,/ সেদিন থাকবেনা আর কোন অধিকার, বিষয় ও বৈভবে।/ সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে,/ এই পৃথিবী যেমন আছে তেমন ঠিক রবে।”

সর্বশেষ - সর্বশেষ সংবাদ

আপনার জন্য নির্বাচিত