মামা-ভাগ্নের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে শত কিশোর-কিশোরীদের ধ্বংস হচ্ছে উজ্জল ভবিষ্যৎ। এদের দিয়ে রাষ্ট্রের মেগা প্রকল্প মেট্রোরেলের মুল্যবান জিনিসপত্র, মোবাইল ফোন, বাড়ী নির্মাণ সামগ্রী, হাঁড়ি পাতিল সহ কারেন্টের তার’ও চুরি কারনো হচ্ছে।
বাংলাদেশ একাত্তর .কম/নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর পল্লবীতে চোরাই মোবাইল ফোনের আইএমইআই নম্বর (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করেছিলো একটি কথিত মামা-ভাগ্নে গ্রুপ।
ভাগ্নে ছাত্রদল কর্মী আর মামা আওয়ামীলীগ কর্মী। তবে ভাগ্নে চোরাই মোবাইলসহ পুলিশের হাতে আটক হলেও মামা রয়েছে অধরা।
পল্লবী থানা পুলিশের চৌকস অফিসার এসআই জহির সহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিশাল এ মোবাইল সিন্ডিকেটের প্রধান (আইএমইআই) সম্রাট ও ইউসুফ আলী’কে গ্রেফতার করে ও বিভিন্ন ব্যান্ডের ৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করে। বাউনিয়াবাধে এক মাত্র সম্রাট-ই নিখুঁত ভাবে মোবাইলের গোপন কাজ গুলো পরিপূর্ণ ভাবে করতে পারে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, সম্রাট কে ছাড়াতে থানায় হানা দেয় গভীর রাতে চর্ম রোগী রাজিব নামের এক ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী। শুধু সম্রাটই নয় মামা-ভাগ্নে গ্রুপের চোর সিন্ডিকেটের কেউ আটক হলেই ভাঙ্গারী চর্মরোগী রাজিব চোরদের বাঁচাতে বিশাল ভুমিকাও পালন করে থাকেন।
গত ৪ই জুন রাতে এইএমইআই সম্রাটকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে পল্লবী থানার এসআই জহির বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দু’জন মোবাইল চোরকে আটক করেছি, তারা বিভিন্ন মোবাইল ফোনের আইএমইএম নাম্বার পরিবর্তন করে চোরাই মার্কেটে বিক্রি করে আসছিলো। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ওই রাতেই কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে একব্যক্তি বলেন, আমি বাউনিয়াবাধ এ-ব্লক ইউনিট আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্রাটের মামা ‘রাজিব বলছি। আমি থানায় আসছি আমার ভাগ্নাকে ছাড়িয়ে নিতে। আপনি কোন সাংবাদিক? আপনি কেনো দারোগাকে ফোন দিলেন? আপনি কি পারেন অপরাধীর বিপক্ষে দারোগাকে ফোন দিতে? দারোগাকে ফোন দিয়ে তথ্য নিতে। আমার ভাগ্নে একটা অপরাধ করছে, আমি সেটা মানি। দারোগার সাথে মিমাংসার কথা চলছে। তাকে ছাড়িয়ে নিবো এই সময় আপনি ফোন করে সব নষ্ট করে দিলেন। আপনাকে আমি দেখে নিবো বলেও হুমকি প্রদান করেন।
বাউনিয়াবাধ এ-ব্লক ইউনিট আওয়ামীলীগের সভাপতি শুক্কুর মাতবর বলেন, এ-ব্লক ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রাজিব নামে কেউ নেই। সে কি করে জানতে চাইলে বলেন, সে তো অনেক কিছুই করে এলাকায় এসে আপনারা খোজ খবর নিলেই জানতে পারবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ৫নং ওয়ার্ড ওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান বলেন, আমার জানামতে রাজিব নামে কেউ এ-ব্লক ইউনিট কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নেই।
এ ছাড়াও যুবলীগ ছাত্রলীগের ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতা কর্মীরা বলেন, চর্মরোগী রাজিব নামের একজন পোড়া বস্তিতে ভাঙ্গারী ব্যবসা করে। তার নিয়ন্ত্রণে বিশ-ত্রিশ জনের একটি কিশোর চোর সিন্ডিকেট রয়েছে। তার ভাঙ্গারী ও চোরাই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে কাউন্সিলরের মিটিং মিছিলে মাঝে মধ্যে অংশ নেয়। আওয়ামী লীগের ইউনিট কমিটিতে তার কোনো নাম নেই। কোনো চোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামীলীগের হতে পারেনা।
বাউনিয়াবাধের স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, রাজিব ভাঙ্গারী দোকান চালায় পোড়া বস্তিতে। সে বিশাল এক চোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। ভাঙ্গারী রাজিব বিভিন্ন দাগি অপরাধীরা আটক হলে পুলিশের সাথে সখ্যতা গড়ে তদবির বানিজ্য করে। সম্রাট তার আপন ভাগ্নে না। সম্রাট তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। সম্রাটের নামে আর আগেও মামলা রয়েছে। এছাড়াও জানাগেছে, বাউনিয়াবাধ এলাকায় যত ভাঙ্গারী দোকান রয়েছে বেশিরভাগ দোকান মালিকরা চোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। ক,বছর আগেও যারা ফেরি করে জিবন চালাতো তারা এখন ভাঙ্গারীর দোকান খুলে কিশোর বয়সের ছেলেমেয়ে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মালামাল চুরি করিয়ে এনে কমদামে কিনে তারা অনেকেই কোটিপতি বনে গেছে।
সুত্র বলছে, বাউনিয়াবাধ লালমাটিয়া মোড় হয়ে শেখ কামাল স্কুল ও কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নুর নতুন কার্যালয় কালভার্ট পর্যন্ত সড়কে চোরাই মোবাইল মার্কেট বসে। এ চোরাই মোবাইল মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ওয়ার্ড ও ইউনিটের সরকার দলীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।
এ মার্কেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও অভিযান পরিচালনা করেছে। তবুও বন্ধ হয়নি এ মার্কেট। সন্ধ্যা হলেই সড়কে জমে উঠে এ চোরাই মোবাইল মার্কেট। অবৈধ বিদুৎ সংযোগে রঙিন লাইটে ঝলমলে হয়ে উঠে মার্কেট-টি। এ সকল মার্কেটের দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলছে একটি রাজনৈতিক মহলের নেতা।
পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় কোনো চোরাই মোবাইল মার্কেট থাকবে-না। চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইন আনুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
