স্টাফ রিপোর্টার | ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | রূপনগর, ঢাকা
রাজধানীর রূপনগরের আরিফাবাদ হাউজিং এলাকায় মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় ‘মক্তব বাহিনী’র বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ভুক্তভোগীর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে।
ঘটনাটি ঘটে ২২ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে, আরিফাবাদ হাউজিং-এর এল ব্লক, ১ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসায়।
ভুক্তভোগী শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজ ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোক্তার হোসেন মক্তব ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এতে উঠে এসেছে একটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের বিস্তার ও তাদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কাহিনি।
চাঁদা না দিলে মিথ্যা মামলার ভয়, প্রাণনাশের হুমকি
জবানবন্দিতে মোস্তাফিজ জানান, তার ভাই মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে একটি ভুয়া মামলার ভয় দেখিয়ে তার বাসায় আসে মোক্তার হোসেন মক্তবের নেতৃত্বাধীন গ্যাং। তারা জানায়, মামলা থেকে রক্ষা পেতে দিতে হবে ২০ লাখ টাকা। অন্যথায় “যা করার করে দেওয়া হবে” বলে হুমকি দেয় তারা।
‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন’-এর আড়ালে চাঁদাবাজি
মোক্তার হোসেন মক্তব নিজেকে ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতা’ হিসেবে পরিচয় দিলেও, বাস্তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার সঙ্গে এই চক্রে ছিল মাহাবুব, বিল্লাল, বাদশা ও লাল হোসেন।
তারা রূপনগর, দুয়ারীপাড়া, ইস্টার্ন হাউজিংসহ আশেপাশের এলাকায় ভয়ভীতি, হুমকি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করত।
রাজনৈতিক মদদ, এজাহারে আসেনি অনেকের নাম
গোপন সূত্র বলছে, এই চক্রটির সঙ্গে এক যুবদল নেতার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যিনি মক্তব বাহিনীকে দীর্ঘদিন ধরে মদদ দিয়ে আসছেন।
ঘটনার দিন শুধু অভিযুক্ত পাঁচজনই নয়, আরও কয়েকজন যুবদল পদধারী নেতাও উপস্থিত ছিলেন, তবে তাদের নাম এজাহারে আসেনি। পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত বলে জানা গেছে।
বিএনপি নেতার কঠোর বার্তা
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, “কে যুবদল করে আর কে বিএনপি করে সেটা বড় কথা নয়—দলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে ছাড় নেই।” তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
পুলিশ জানায়…
রূপনগর থানার এসআই ইব্রাহীম জানান, “বাদী মোস্তাফিজ একটি ছাত্র হত্যার মামলায় অভিযুক্ত হলেও, মোক্তার হোসেন ও তার সহযোগীরা তাকে মামলা থেকে মুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। আমরা অভিযুক্তদের আটক করে আদালতে পাঠিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, “চাঁদাবাজি মামলার পাশাপাশি মিরপুর মডেল থানার এক মামলায়ও তাদের আলাদাভাবে চালান করা হয়েছে।”
জনমনে উদ্বেগ, চক্র নির্মূলের দাবি
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এ ধরনের গ্যাং প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে গেলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?
তারা শুধু গ্রেপ্তারে সন্তুষ্ট নন—এই চক্রের পেছনের ক্ষমতাবান মদদদাতাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন।
মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, এই ধরনের অপরাধ যেন ভবিষ্যতে রোধ করা যায় এবং পুরো সিন্ডিকেটটি আইনের আওতায় আনা হয়।