ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে হত্যা, দেহ টুকরো করে পানির ট্যাংকে—কিন্তু পরিবার বলছে, ছিল আত্মরক্ষার লড়াই; আন্তর্জাতিক চাপ ও ‘ব্লাড মানি’ আলোচনার মাঝে স্থগিত রায়
বাংলাদেশ একাত্তর ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার ফাঁসি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টা আগে ইয়েমেনের বিচার বিভাগ তার দণ্ডাদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। ২০১৭ সালে ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কেরালার এই নার্সের মুক্তির শেষ আশার নাম এখন ‘দিয়াহ’—ইসলামি শরিয়ায় স্বীকৃত আর্থিক ক্ষতিপূরণ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, বুধবার (১৬ জুলাই) নিমিশার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার রাতে ইয়েমেন সরকার তার মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায়। তবে এই স্থগিতাদেশ কোনোভাবেই স্থায়ী মুক্তি নয়। আইন অনুযায়ী, ভিকটিমের পরিবার যদি ‘দিয়াহ’ গ্রহণে সম্মত হয়, তবেই রেহাই পেতে পারেন নিমিশা।
কী ঘটেছিল?
২০০৮ সালে ইয়েমেনে নার্স হিসেবে কাজ করতে যান নিমিশা। নিজের ক্লিনিক খোলার স্বপ্নে ২০১৫ সালে তিনি স্থানীয় নাগরিক তালাল মাহদির সঙ্গে অংশীদারিত্বে একটি ক্লিনিক চালু করেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পর্ক বিষিয়ে ওঠে।
অভিযোগ রয়েছে, মাহদি নিমিশার অর্থ ও পাসপোর্ট জব্দ করে তাকে ভয়ভীতি ও নির্যাতনের মধ্যে রাখতেন। একপর্যায়ে মাহদির বিরুদ্ধে মাদক খাইয়ে দেওয়ার ও জোরপূর্বক স্ত্রী পরিচয়ে প্রশাসনিক সুযোগ নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হলেও কোনো সহায়তা পাননি তিনি।
নিমিশার দাবি, ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই আত্মরক্ষার চেষ্টায় মাহদিকে ঘুম পাড়ানোর ইনজেকশন দেন তিনি। কিন্তু ডোজ বেশি হয়ে যাওয়ায় মাহদি মারা যান। পরে এক সহকর্মী হানানকে সঙ্গে নিয়ে মাহদির মরদেহ টুকরো করে পানির ট্যাংকে রেখে দেন তারা। পালানোর সময় ধরা পড়েন নিমিশা এবং তখন থেকেই ইয়েমেনের কারাগারে বন্দি।
আন্তর্জাতিক চাপ, পরিবার ও কূটনৈতিক উদ্যোগ
নিমিশার মা, একজন দরিদ্র গৃহকর্মী, ২০১৪ সাল থেকেই মেয়েকে বাঁচাতে ইয়েমেনে অবস্থান করছেন। ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন মামলা পরিচালনায় সাহায্য করছে এবং নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে ইতোমধ্যে ১০ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে।
তবুও তালাল মাহদির পরিবার এখনও ‘দিয়াহ’ গ্রহণে অনিচ্ছুক। তার বড় ভাই আব্দেলফাত্তাহ মাহদি বিবিসিকে বলেন, “আমরা কেবল আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে বিচার চাই। কোনো জনমত বা অর্থ আমাদের অবস্থান বদলাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “হত্যার বিভৎসতা এবং বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় আমরা ক্ষুব্ধ ও ক্লান্ত।”
এখনো শেষ হয়নি আশা
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইয়েমেন সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং এখনো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
‘সেভ নিমিশা’ সংগঠনের মুখপাত্র বাবু জন বলেন, “মানবিক, কূটনৈতিক এবং নৈতিক সব পথেই আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নিমিশাকে ফিরিয়ে আনাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”
মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক সহানুভূতির এক জটিল মোড়ে দাঁড়িয়ে এখন নিমিশা প্রিয়ার জীবন। মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হয়েছে, কিন্তু তা চূড়ান্ত মুক্তির নির্দেশ নয়। ‘দিয়াহ’ গৃহীত হলে তবেই শেষরক্ষা হতে পারে।