তারেক রহমান: তিনবারের গুমের সাক্ষী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক সোশালিস্ট কর্মী
রাজু আহমেদ | ঢাকা | সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুম-নির্যাতনের অন্ধকার অধ্যায়ে উঠে আসছে এক তরুণ সোশালিস্ট কর্মীর নাম—মো. তারেক রহমান। শেখ হাসিনার আমল থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসা এই সাহসী তরুণ বর্তমানে সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। দলের পদ-পদবির লোভ নয়, দেশ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি রাজনীতি করছেন—এমনই মন্তব্য করেছেন তার অনুসারীরা।
দলের তৃণমূল কর্মীরা মনে করেন, বিএনপি যদি বগুড়া বা ঢাকা থেকে তারেক রহমানের মতো সৎ, সংগ্রামী ও নির্ভীক মানুষকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে দেশের মানুষ বিএনপির প্রতি আরও আস্থা রাখবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো দখলবাজি, চাঁদাবাজি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বরং তিনি বিভিন্ন সময় মৌসুমি ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং জনস্বার্থে নিরন্তর কথা বলেন—যা দলের অন্য অনেক নেতার মধ্যে দেখা যায় না।
তিনবারের গুম, প্রতিবারই বেঁচে ফেরার লড়াই
তারেক রহমানের নিজের ফেসবুক ওয়াল থেকে জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে তিনি তিনবার জোরপূর্বক গুমের শিকার হন। ২০১৮ সালের প্রথম গুমের ঘটনা সম্পর্কে তিনি লেখেন,
“আমাকে ২০১৮ তে গুম করা হলে এমন একটি ঘরেই রাখা হয়। তবে এভাবে দুটো ফুটো ছিল না। একটা লাল রঙের অ্যাডজাস্ট ফ্যান ছিল, প্রচণ্ড শব্দ করত সেটা। টয়লেট পেলে দরজা ঝাঁকালেই মাস্ক পরা লোক এগিয়ে আসত। দুটো দরজা ছিল—একটা কাঠের আর একটা লোহার শিকের।”২০২২ সালে আবারও তাকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নেয়। সেই সময় তিনি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিলের মামলার ফাইলিং করছিলেন। চোখ বাঁধা অবস্থায় নির্যাতনের পর একদিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন ২০২৪ সালের ২২ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর, যখন তাকে ডিজিএফআই অফিসে নেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি। দেয়ালে ৩ ফুট পর পর হাত-পা বাঁধার লোহার রিং ছিল। ৩য় দিনে চোখ খোলা অবস্থায় র্যাব-১ এর মিডিয়া সেন্টারে নিজেকে দেখি। আমাকে ইলেকট্রিক শর্ট দেওয়া হয় প্রায় ২৫ বার। উরু, ঘাড়, বাহু, পেটের নরম অংশে শর্ট দিত। একবার বিদ্যুতের উপর প্রস্রাব করিয়েছিল—তার দাগ এখনো শরীরে।”
তিনি আরও লেখেন,
“র্যাবের ডিজি নিজে এসে আমাকে পেটায়। রুমটি ছিল তিন ফুট বাই তিন ফুট, দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যায় মাত্র। পরে ডিবি অফিসে হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত আমি অচেতন ছিলাম।”
তারেক রহমান জানান, নির্যাতনের ফলে তিনি বারবার সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন, কিন্তু কখনোই ন্যায়ের দাবি থেকে পিছু হটেননি। কেরানীগঞ্জে আটক অবস্থায়ও চিকিৎসা পাননি, ক্ষতস্থানে পুঁজ বের হলেও এক কাপ পানি বা ওষুধ কেউ দেয়নি। দেয়ালে দেয়ালে এখনো আমার চিৎকার লেগে আছে’
শেষে তারেক রহমান লিখেছেন,
“ইউনূস স্যারের সাথে অনেকে গুমের জায়গা দেখতে গিয়েছিল। আমিও যেতে চেয়েছিলাম, যেখানগুলোতে আমাকে রাখা হয়েছিল। দেয়ালে দেয়ালে আমার চিৎকারগুলো হয়তো এখনো লেগে আছে।”
তারেক রহমানের এই বেদনাদায়ক বিবরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বহু তরুণ তাঁর সাহসিকতা, নির্যাতন সহ্য করেও সত্য উচ্চারণের মানসিকতাকে অভূতপূর্ব মনে করছেন।
দলীয় সূত্র বলছে, তারেক রহমানের মতো নির্ভীক ও নির্লোভ মানুষ আজকের রাজনীতিতে বিরল। তাঁকে যদি ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও গভীর হবে—এমনটাই আশা অনেকের।


















