এইচএসসি পরীক্ষার্থীর বাবা নেই, মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে—মানবিকতা নয়, অমানবিক নিয়ম চালু রাখল কেন্দ্র প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ। “নিয়মের বস্তা পচা বেড়াজালে নষ্ট হলো পরীক্ষার্থীর এক বছর।
রাজু আহমেদ|
ঢাকা | ২৬ জুন ২০২৫
এইচএসসি পরীক্ষার মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিল এক শিক্ষার্থী। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস ও নিয়মের কঠোরতা একসঙ্গে এসে দাঁড়াল তার সামনে দেয়াল হয়ে। মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে, চোখের জল মুছতে মুছতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছেও হলের দরজায় আটকে দেওয়া হলো তাকে—কারণ, সে ‘সময়মতো’ কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেনি!
পরীক্ষার্থীর বাবা নেই। মা আজ সকালে মেজর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে এই মেয়েটিকে একাই সামলাতে হয়েছে সব কিছু। মাকে ভর্তি, জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করা, এরপর সেখান থেকে দৌঁড়ে মীরপুর বাংলা কলেজ কেন্দ্রে পৌঁছানো—সবই একাই করেছে সে।
কিন্তু এত ত্যাগ, এত সংগ্রামও জয় করতে পারেনি এই দেশের ‘নির্দয় নিয়ম’। কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাকে পরীক্ষা দিতে দেননি। কারণ? সে কয়েক মিনিট দেরিতে এসেছে!
অঝোরে কাঁদছিল মেয়েটি। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। কেউ বলছেন, “নিয়ম মানুষকে সাহায্য করতে হয়, শাস্তি দিতে নয়।” কেউ লিখেছেন, “একটা বছরের জীবন নষ্ট করলেন কেবলমাত্র সময়মতো না আসার অজুহাতে—এটা অন্যায়, অমানবিক, এবং নিপীড়নমূলক।”
শিক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকে বলছেন—এই নিয়ম অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। পরীক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে, অ্যাডমিট কার্ড হাতে নিয়ে, মায়ের চিকিৎসার মাঝখান থেকে সময় বের করে কেন্দ্রে এসেছে—তাকে পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই কারও।
এই ঘটনাটি ফের প্রমাণ করল—এই দেশে গরিব, অসহায় আর সাধারণ মানুষদের জন্য নিয়ম আইন, আর ক্ষমতাবানদের জন্য অবাধ ছাড়। প্রশ্ন উঠছে, এই মেয়ে যদি কোনো প্রভাবশালী পরিবারের হত, তাহলে কি তাকে ঢুকতে দেওয়া হতো না?
পরীক্ষা দিতে না পারার এই অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিল করে, মানবিক বিবেচনায় বিশেষ ব্যবস্থায় মেয়েটিকে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত দ্রুত হস্তক্ষেপ করে একটি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শুধু এই শিক্ষার্থীর জন্য নয়—সারা দেশের জন্য একটিই বার্তা হোক আজ থেকে: নিয়ম নয়, মানবিকতা আগে।