সুমন মাস্টার: প্রকাশিত, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি (ডিওএইচএস) সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক নানা অভিযোগ থেকে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় এখানে গড়ে উঠেছে একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠান, যেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠছে বারবার।
বিশেষ করে, অপরাধীদের জন্য এই এলাকা যেন আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দাগি অপরাধীরা এখানে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে এবং অফিস নিয়ে বাহিরে সব অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, পুলিশের উপস্থিতি এখানে কম, কারণ ডিওএইচএস এলাকায় প্রবেশ করতে গেলে তাদের বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। ফলে অনেক অপরাধ সংঘটিত হলেও তা সহজেই ধামাচাপা পড়ে যায়।
সাংবাদিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা, অপরাধীদের জন্য নিরাপদ এলাকা?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলা হলেও, ডিওএইচএস এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন যে, ডিওএইচএসে মিডিয়া সংস্থার লোগো লাগানো গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ফলে এখানে সংঘটিত অপরাধের সত্যতা যাচাই করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডিওএইচএসে বেশ কয়েকটি বিউটি পার্লার ও ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেখানে নানান অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলছে মানব পাচার ও ব্ল্যাকমেইলের মতো অপরাধ।
অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় দুই বোনের ওপর হামলা
সম্প্রতি, মিরপুর ১২ নম্বর ডিওএইচএস শপিং কমপ্লেক্সে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় লিজা ও মাহফুজা নামে দুই বোনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাজিয়াস বিউটি পার্লারের মালিক সাজিয়া আফরিন ও ফারজানা আফরিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা জোর করে অবৈধ কাজ করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছিলেন।
লিজা ছয় মাস আগে এই পার্লারে চাকরি নেন, কিন্তু অনৈতিক কার্যকলাপ দেখে মাত্র ছয় দিন পরই চাকরি ছাড়তে চান। কিন্তু মালিকপক্ষ তার জাতীয় পরিচয়পত্র আটকে রেখে বাড়তি টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় তাকে মাসের পর মাস হয়রানি করা হয়। পরে বিষয়টি মার্কেট কর্তৃপক্ষকে জানাতে গেলে তার ওপর হামলা করা হয়।
তার বোন মাহফুজা এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। পরে সাজিয়াস পার্লারের মালিকপক্ষ উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে ফেলে। জামিনে বের হওয়ার পর মাহফুজা পাশের আরেকটি পার্লারে চাকরি নেন, কিন্তু ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিউটি শেষে বের হওয়ার সময় আবারও পরিকল্পিতভাবে হামলার শিকার হন, এঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে এ প্রতিবেদকের কাছে।
আইনের আশ্রয় নেবে ভুক্তভোগীরা
লিজা ও মাহফুজা ইতোমধ্যে পল্লবী থানায় ও ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারা প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ডিওএইচএসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও এর ভেতরে চলমান কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ নাগরিকরা দাবি করছেন, এই অভিজাত এলাকায় অবৈধ কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়া যাবে না এবং অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।
অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় মারধরের বিষয়ে অভিযুক্ত সাজিয়াস বিউটি পার্লারের মালিক সাজিয়া আফরিনের কাছে জানতে চাইলে উল্টো তিনি এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন, ভিডিও কোথায় পেলেন, কে দিছে, সংবাদ প্রকাশ কেন করবেন”আমি পরে কথা বলবো।”
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


















