‘আমি লড়াই করেছিলাম উপদেষ্টার বিরুদ্ধে, ডিবির হুমকিতে রেকর্ড করেছিলাম তুষারের অডিও’
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ জুন ২০২৫
এনসিপি নেতা সারোয়ার তুষারের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া একটি কথোপকথনের প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন দলটির নেত্রী নীলা ইস্রাফিল। তুষারের সঙ্গে ফোনালাপে আপত্তিকর প্রস্তাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, “আমি ক্ষমতাশালী পুরুষদের মুখোশ টেনে ধরেছি—প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফ থেকে শুরু করে প্রাক্তন স্বামী, এমনকি তুষার পর্যন্ত।”
সামাজিক মাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্টে নীলা জানান, এনসিপিতে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই সাংগঠনিকভাবে তুষারের সঙ্গে পরিচয়। কিন্তু নেপালে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় তুষারের আচরণ পরিবর্তিত হয়।
“সে বলতো—‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘তোমার প্রতিবাদী কণ্ঠ আমাকে আকৃষ্ট করে।’ আমি বারবার বলেছি, আমাদের সম্পর্ক যেন ফর্মাল থাকে। কিন্তু সে থামেনি,”—বলেন নীলা।
তুষারের কথিত দাবি অনুযায়ী, গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং নীলা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। “সে আমাকে জানায়, ডিবিকে বলেছে আমি তার গার্লফ্রেন্ড। আমি হতবাক হই। একজন রাজনৈতিক সহকর্মীর এমন আচরণ শুধু অশোভনই নয়, আমার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।”
এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা থেকে তিনি আলাপটি রেকর্ড করেন বলে জানান। “প্রায় দেড় ঘণ্টার আলাপে আমি ৪৭ মিনিট রেকর্ড করি। বিষয়টি আমি মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, বিথি সপ্তর্ষি ও এক সাংবাদিকের সঙ্গে শেয়ার করি,”—বলেন নীলা।
অডিও ভাইরাল হওয়ার পর নীলা তার নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি, নারী সহকর্মীরাও না। আমি পাশ্চাত্য পোশাক পরি, সোজাসাপ্টা কথা বলি—এটাই আমার অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ছোট মেয়ের জন্ম হয়েছে কারাগারে। ৩৫ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় আমাকে হাজির না করেই আটক রাখা হয়েছে। আমি যুদ্ধ করেছি বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে, সাবেক উপদেষ্টার যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে, আজ তুষারের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে হয়েছে।”
নীলা দাবি করেন, তুষার তাকে সাংগঠনিকভাবে কোণঠাসা করতে বিভিন্ন কমিটি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি দলীয়ভাবে মীমাংসা করতে চেয়েছি। তুষার যেন শাস্তি পায়, শুদ্ধ হয়—এই চেয়েছি। আমি তার কোনো ক্ষতিও চাইনি।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “সবাই নীলা ইস্রাফিল নয়। আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে লড়েছি, শিশু নিয়ে জীবন চালিয়েছি। তুষারের মতো কেউ যদি পার্টিতে মেয়েদের নিপীড়ন করে, সে যেন শাস্তি পায়, সেটাই আমার চাওয়া।”
সবশেষে নীলা বলেন, “আমি এই ঘটনা নিয়ে আর কিছু বলব না। যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলব। আমি এগিয়ে যেতে চাই, কারণ আমার লড়াই এখনো শেষ হয়নি।”