রাজু আহমেদ: প্রকাশিত, ২১ মার্চ ২০২৫
প্রতিবছর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জীবনে আসে পবিত্র রমজান মাস, যা আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ইবাদতের মাস হিসেবে পরিচিত। রমজান মাস ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি প্রধান স্তম্ভ। এ মাসে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের খাবার, পানীয় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থেকে রোজা পালন করেন, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য করা হয়।
রমজান মাসের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য:
রমজান মাসের মূল উদ্দেশ্য হলো আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এ মাসে রোজাদারেরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদাত-বন্দেগী, নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত এবং তাওবা ইস্তেগফার করেন। রমজানের রোজা মানুষকে ধৈর্যশীলতা শেখায় এবং নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে।
রমজানের ফজিলত:
১. গুনাহ মোচন: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করা হবে।” (সহীহ বুখারি)
২. জান্নাতের দরজা খোলা: রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়।
৩. লাইলাতুল কদরের ফজিলত: রমজান মাসের শেষ দশকে আসে মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর। এ রাতের ইবাদাত হাজার মাসের ইবাদাতের সমান।
৪. সদকাতুল ফিতর: রমজানের শেষে ঈদুল ফিতরের আগে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে সদকাতুল ফিতর প্রদান করা হয়, যা রোজাদারের জন্য পাপের ক্ষমা এবং দুঃস্থদের সহযোগিতার মাধ্যম।
রমজান মাসের রীতি-নীতি:
রমজানে রাতের শেষ প্রহরে সেহেরি খাওয়া হয় এবং ফজরের আজানের পূর্বে সেহেরি শেষ করা হয়। সেহেরির বরকত সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, “তোমরা সেহেরি খাও, কারণ সেহেরিতে বরকত রয়েছে।” (সহীহ বুখারি)
ইফতারের সময় সূর্যাস্তের পর আজান শোনার সাথে সাথে রোজা ভাঙা হয়। ইফতারের আগে রোজাদারের জন্য দোয়া কবুল হয় বলে উল্লেখ আছে।
রমজানের সামাজিক প্রভাব:
রমজান মাসে মুসলিম সমাজে ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি এবং মানবিকতা বৃদ্ধি পায়। ধনী-গরিব সবাই এক কাতারে এসে ইফতার করেন। পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ গড়ে ওঠে। ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে রমজানের সমাপ্তি ঘটে, যা আনন্দ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও উৎসবের প্রতীক।
রমজান মাস শুধুমাত্র সংযম ও ইবাদতের মাস নয়; এটি আত্মশুদ্ধি, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহা সুযোগ। তাই প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উচিত এই মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে সঠিকভাবে রোজা পালন করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।