ক্ষমতার আড়ালে জমি দখল, চাঁদাবাজি, বিচার বাণিজ্য ও ছাত্রদের ওপর হামলা-থানা পুলিশ ম্যানেজ করে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাদল
বাংলাদেশ একাত্তর:ডেস্ক, প্রকাশ, ১৫ জুলাই ২০২৫
ঢাকা: ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বাদল এখন বাউনিয়াবাধের ‘অঘোষিত নিয়ন্ত্রক’। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এসএম মান্নান কচির ছায়ায় এবং তার ভাই ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রউফ নান্নুর প্রত্যক্ষ মদদে বাদল দীর্ঘদিন ধরে বাউনিয়াবাধ এলাকায় সন্ত্রাস, জমি দখল, বিচার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং নারী নিপীড়নের মতো গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে।
ক্ষমতার ছত্রছায়ায় বাদল একের পর এক ভয়ংকর অপরাধ চালিয়ে এলাকাকে পরিণত করেছে জিম্মি জনপদে। মিরপুর ১১ সরকারি-বেসরকারি জমি দখল করে পার্কের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ নান্নু মার্কেট। ২০০০ সাল থেকেই নান্নুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই মার্কেট থেকে কোটি কোটি টাকা ভাড়া আদায় করে ভাগাভাগি করেছে কচি, নান্নু, বাদল ও তাদের গডফাদাররা।
বিচার বাণিজ্য ও নারী হয়রানি:
এলাকার সাধারণ মানুষ, বাড়িওয়ালা এমনকি নারীরাও বাদলের নিপীড়ন থেকে রেহাই পায়নি। কাউন্সিলর নান্নুর অফিসকে ‘গণবিচারালয়’ বানিয়ে সেখানে সালিশের নামে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। বাদলের বিরুদ্ধে নারী হয়রানির অভিযোগও রয়েছে, যা বহুবার থানা পুলিশকে জানানো হলেও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ কেনার জন্য বাদল ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত গাড়িতে ঘুরিয়ে দেখিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের গুঞ্জনের পর সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। কচি-নান্নু এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিলেও কালশী ট্রাক স্ট্যান্ড ও নান্নু মার্কেট থেকে এখনো তারা নিয়মিত চাঁদার ভাগ পাচ্ছে।
ছাত্রদের ওপর বর্বর হামলা:
সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ আগস্টের প্রতিটি সকালে। ছাত্রজনতার ন্যায্য আন্দোলনে বাদল তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালায়, যাতে অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ আহত হয়। ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলার জন্য সরাসরি বাদল ও তার অনুসারীদের দায়ী করে।
হামলার পরেও সে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মার্কেট থেকে ভাড়া তুলছে, বরিশালের একাধিক মালিক সমিতির নেতাকে সঙ্গে রেখে নিজ অবস্থান আরও শক্ত করছে।
পুলিশ ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে:
স্থানীয় সূত্র বলছে, বাদলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পল্লবী থানা পুলিশের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বরং মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে থানা ‘ম্যানেজ’ করেই সে একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করছে।
জনমনে প্রশ্ন:
পল্লবী ও বাউনিয়াবাধের সচেতন রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন—ছাত্রদের ওপর হামলা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, বিচার বাণিজ্য ও নারী নিপীড়নের মতো গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন বাদল এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারছে? এসএম মান্নান কচি ও নান্নুর ছত্রছায়ায় এই অপরাধের রাজত্ব আর কতদিন চলবে?