নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০২৫
রাজধানীর কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি জোনের উপপুলিশ কমিশনার জিসানুল হকের সই করা তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিষয়ে ওসির বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগেরই সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার রাতে ওসি মোক্তারুজ্জামান থানায় উপস্থিত না থেকে বাসায় অবস্থান করায় তিনি দায়িত্বশীলতার ঘাটতি দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে অপেশাদারিত্বের প্রমাণ মিলেছে। আবদুল ওয়াদুদের বাসায় বহিরাগতদের তৈরি ‘মব’ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন এসআই বেলাল—এ তথ্য তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
ডিএমপির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে সদর দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। নিরপরাধ কোনো পুলিশ সদস্য যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
ওসি মোক্তারুজ্জামানের বক্তব্য
কলাবাগান থানার সাবেক ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, “আমি এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। ঘটনার সময় মধ্যরাত ছিল, আমি বাসায় অবস্থান করছিলাম। অভিযোগকারী কেন আমার নাম দিয়ে অভিযোগ করলেন, সেটি আমার বোধগম্য নয়। আমি ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছি।”
অভিযোগকারী ড. ওয়াদুদের পরিচয় ও বিতর্ক
অভিযোগকারী ড. আবদুল ওয়াদুদ নিজেকে একজন শিক্ষাবিদ, লেখক ও গবেষক দাবি করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী পক্ষে পোস্টারিং করেন, যেখানে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে নিজের ছবি বসিয়ে লেখেন: “ফিকামলি তত্ত্বের জনক, প্রেসিডিয়াম সদস্য—বঙ্গবন্ধু পরিষদ, প্রধান পৃষ্ঠপোষক—বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি।”
সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ড. ওয়াদুদ কলাবাগান এলাকায় ভয়ে-আতঙ্কে রাজত্ব করেছেন। তিনি অবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, “স্বৈরাচারের দোসররা দেশ ছেড়ে পালালেও ওয়াদুদের মতো ভণ্ডরা এখনো ঢাকায় কীভাবে বহাল তবিয়তে আছে?”
এক বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ওয়াদুদ টাকার জোরে এখনো ঢাকায় আছে। সে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তার সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা হোক এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হলে সারাজীবন জেলেই থাকতে হবে।”
অভিযোগ ও তদন্তের বিস্তারিত
ড. ওয়াদুদ গত ২ মে ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগে বলেন, এসআই বেলাল ও মান্নান তাকে থানায় না নেওয়ার শর্তে এক কোটি টাকা দাবি করেন। দেন-দরবারের পর তিনি দুই লাখ টাকা দিলে কিছু সময়ের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বাকির জন্য তিনজন সিভিল পোশাকধারী ‘ডিবি পরিচয়ধারী’ ব্যক্তি তার বাসায় পাহারায় থাকেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পুলিশি অভিযানের সময় কোনও মামলার কাগজ দেখানো হয়নি। তার বাসা থেকে বিদেশি ও দুর্লভ প্রজাতির ম্যাকাও, কাকাতুয়া, রেইনবো লরি পাখি লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। একটি গর্ভবতী হরিণ পুলিশের উপস্থিতিতে আতঙ্কে ছোটাছুটি করে মারা যায়। এমনকি পুলিশ সদস্যরা তার কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও সিসিটিভির হার্ডডিস্কও নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে এই অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ মে ওসি মোক্তারুজ্জামান, এসআই বেলাল উদ্দিন ও মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে তদন্তে অভিযোগের কোনোটিরই সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মেলেনি।
সরকারের বার্তা: অপকর্মে জড়িত দোসরদের ছাড় নয়
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, তদন্ত নিরপেক্ষ হয়েছে এবং এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে, কেবলমাত্র সত্য তথ্যের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো রাজনৈতিক প্রভাবশালী বা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কেউ যেন নিরাপদ না থাকে, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
সরকারও কঠোর বার্তা দিয়েছে—আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় অপকর্ম করা দোসরদের কোনো অভিযোগকে অন্ধভাবে গ্রহণ করবে না। বরং তাদের অতীত অপকর্ম তদন্ত করে প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ড. ওয়াদুদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি
ওসি মোক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বিষয়ে জানতে ড. আবদুল ওয়াদুদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এর মধ্যে কলাবাগান বাসি মানববন্ধন করেছেন, আওয়ামী দোসর ড. আবদুল ওয়াদুদ এর বিরুদ্ধে। তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
