নিজ খরচে শতাধিক অসুস্থ কুকুরের চিকিৎসা দিয়েছেন মিরপুরের এই মানবিক মানুষ কাওসার ভাই।
রাজু আহমেদ | প্রকাশ, ৩০ এপ্রিল ২০০২৫
মিরপুর, ঢাকা:
রাজধানীর ব্যস্ত জীবনযাত্রায় যেখানে অসহায় পথপ্রাণীরা প্রতিদিন অবহেলার শিকার, সেখানে এক সাধারণ মানুষ হয়ে উঠেছেন তাদের জন্য এক অসাধারণ আশ্রয়। তার নাম মোহাম্মদ আবু কাওসার। পেশায় কোনো পশু চিকিৎসক নন, বরং কর্মজীবনের ফাঁকে-ফাঁকে তিনি চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন রাস্তায় পড়ে থাকা অসুস্থ কুকুরদের।
স্থানীয়রা তাকে ভালোবেসে ডাকেন—‘ কাওসার ভাই’। তার এই ডাকনাম এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠেছে মিরপুরের মানুষের কাছে।
গত এক মাস ধরে মিরপুরের কালশী রোডের আল-ফালা ব্যাংকের সামনে দেখা যাচ্ছে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য—এক আহত পথকুকুর প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হয় কাওসার ভাইয়ের সামনে, নিজে থেকেই শুয়ে পড়ে চিকিৎসার জন্য। গলায় ছিল প্রায় পাঁচ ইঞ্চি গভীর ক্ষত, যার ভেতরে পোকামাকড় বাসা বেঁধেছিল।
কাওসার ভাইয়ের ভাষায়, “প্রথম যেদিন ওকে দেখি, মনে হয়েছিল বাঁচানো যাবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে ওর চোখে ফিরে আসে আশার আলো। এখন প্রায় সুস্থ, ইনশাআল্লাহ আর তিন-চার দিনের মধ্যে পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে।”
এই একটি কুকুরই নয়—এভাবেই গত কয়েক বছরে তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন প্রায় শতাধিক পথকুকুরকে।
ওষুধ, ব্যান্ডেজ, খাবার, জীবাণুনাশক—সবই সংগ্রহ করেন নিজের পকেট থেকে। এরই মধ্যে খরচ করেছেন কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু তার মুখে একটিও আক্ষেপ নেই।
“ওদের চোখে যখন শান্তি দেখি, যখন দেখি ব্যথা নেই, তখন আমার মন ভরে যায়,”—বললেন আবেগমথিত কণ্ঠে।
রাজধানীতে সরকারি পশু চিকিৎসা ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রায় নেই বললেই চলে। এমন বাস্তবতায় মোহাম্মদ আবু কাওসার হয়ে উঠেছেন এক চলমান ক্লিনিক, এক মানবিক চেতনার প্রতীক।
স্থানীয়দের কাছে তিনি পরিচিত ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’। কেউ তাকে দেখে অবাক হন, কেউ প্রশংসায় মুখর। তবে তার একটাই চাওয়া—“এই প্রাণগুলো যেন আমাদের একটু সহানুভূতি পায়, এটাই চাই।”