সুমন মাস্টার | প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫
রাজধানীর রূপনগরে সংঘবদ্ধ অপহরণ চক্রের হিংস্র তৎপরতার শিকার হয়েছেন এক যুবক। প্রকাশ্য সড়ক থেকে অপহরণ করে নির্জন স্থানে আটকে রেখে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। ঘটনাটি শুধু নগরবাসী নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও চরমভাবে নাড়া দিয়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রূপনগর থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
ভিকটিম ও ঘটনার বিবরণ:
ভিকটিম ছাইম উদ্দীন সাকিব (২৬), পিতা: সাইফ উদ্দিন আহমেদ, মাতা: শাহ নেওয়াজ বেগম; স্থায়ী ঠিকানা: চরকৈলাস, হাতিয়া, নোয়াখালী; বর্তমান: সাত মসজিদ হাউজিং, মোহাম্মদপুর, ঢাকা—তিনি ৯ এপ্রিল ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩০টার দিকে বন্ধু মো. তমিজের সঙ্গে দেখা করে রাত ৮টার দিকে রূপনগরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পৌঁছান। ঠিক তখনই পূর্বপরিকল্পিতভাবে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র তাকে একা পেয়ে ঘিরে ফেলে।
অভিযুক্তরা:
১। আনোয়ার হোসেন আকাশ (২৬)
২। মো. রবিউল ইসলাম (৩০)
৩। মো. মিনহাজুল ইসলাম মহিন (৩২)
এছাড়া আরও ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মিলে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে রূপনগর আবাসিক এলাকার ২৩ নম্বর রোডের পশ্চিম মাথায় ঝিলপাড় কালভার্টের পাশে একটি গাছতলায় নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর তাকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করা হয়। একই সঙ্গে পরিবারের কাছে ফোনে হুমকি দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ বাবদ তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করে এবং পরে আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা:
১। আনোয়ার হোসেন আকাশ (২৬)
পিতা: আব্দুর রাজ্জাক, মাতা: ফিরোজা আক্তার
স্থায়ী: চর মহেশ্চর, সোনাগাজী, ফেনী
বর্তমান: ১/ডি, উত্তর আদাবর, আদাবর, ঢাকা
২। মো. রবিউল ইসলাম (৩০)
পিতা: আব্দুল মালেক, মাতা: ফরিদা বেগম
স্থায়ী: বুখাইনগর (চরমোনাই), কোতোয়ালী, বরিশাল
বর্তমান: বাসা ৪৮, রোড ৩, রূপনগর টিনশেড, ঢাকা
৩। মো. মিনহাজুল ইসলাম মহিন (৩২)
পিতা: মো. হাবিবুল ইসলাম, মাতা: মোছা. মিনুয়ারা বেগম
স্থায়ী: খলিশাপচা, নীলফামারী সদর
বর্তমান: রোড ২৯ (পশ্চিম পার্শ্ব), রূপনগর, ঢাকা
পুলিশি অভিযান ও মামলা:
ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই রূপনগর থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে এবং তিন অভিযুক্তকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।
ঘটনার পরদিন, ১০ এপ্রিল ২০২৫, রূপনগর থানায় এফআইআর নম্বর-৭ অনুযায়ী দণ্ডবিধির ধারা ৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩৪ অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়।
অবশিষ্ট অপহরণকারীদের ধরতে অভিযান চলছে:
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার তিনজন ছাড়াও এই অপহরণে আরও অন্তত ১০-১২ জন জড়িত ছিল। তাদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
থানার ওসি ও এলাকাবাসীর মন্তব্য:
রূপনগর থানা এলাকার বাসিন্দারা জানান, থানার বর্তমান ওসি এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘরের মানুষকে চেনেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি বহু বছর অপারেশন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে ওসি হিসেবে যোগ দেন।
তবে তার ওসিতে আসার পর চাঁদাবাজি, দখলবাজি, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অপরাধপ্রবণ এলাকা:
দুয়ারীপাড়া, শিয়ালবাড়ী, রূপনগর আবাসিক এলাকা, টিনশেড, ঝিলপাড় বস্তি, আনবিক শক্তি কমিশন এলাকা, ভোলাইয়া বস্তি, মনির মোল্লার বাড়ির উত্তর পাশের বস্তি, রজনীগন্ধার পেছনের বস্তি, সাবেক কাউন্সিলর রজ্জব হোসেনের ভবনের সামনের বস্তি, ময়লা কামাল ও লতিফ মোল্লার বাড়ির পেছনের বস্তি, সাত্তার মাতবর ও শরিফ মাতবরের বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকাকে ‘অপরাধ জোন’ হিসেবে উল্লেখ করে এলাকাবাসী বলছে, এখানে পুলিশের কড়া নজরদারি প্রয়োজন।
দাবি:
সড়ক দখল, ফুটপাত, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও অটোরিকশা খাতে যারা মাসোহারা তোলে বা অবৈধ নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের বিরুদ্ধেও রূপনগর থানার ওসির কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান স্থানীয়রা।
