বুধবার , ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ সংবাদ
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সাহিত্য

মিরপুর জাতীয় গৃহায়ণ অফিসে ঘুস ছাড়া ফাইল চলেনা! মুক্তিযোদ্ধা হতাশ!

প্রতিবেদক
bangladesh ekattor
ডিসেম্বর ১৫, ২০২১ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
মিরপুর জাতীয় গৃহায়ণ অফিসে ঘুস ছাড়া ফাইল চলেনা! মুক্তিযোদ্ধা হতাশ!

মিরপুর জাতীয় গৃহায়ণ অফিসে ঘুস ছাড়া ফাইল চলেনা! মুক্তিযোদ্ধা হতাশ!

মিরপুর প্রতিনিধি: সুমন/ বুধবার/১৫/১২/২০২১ইং

মিরপুরে জাতীয় গৃহায়ণ অফিসে আসা সেবা প্রত্যাশীদের ঘুস ছাড়া ফাইল চলেনা। এ প্রথা মানুষের মুখে মুখে। ফাইলে সই করার আগেই কর্মকর্তাদের ঘুষের টাকা পরিশোধ করতে হয় তাদের। যারা দেয় তাদের কাজ দ্রুত হয়। যদি কেউ ঘুষ দিতে  অপারগতা প্রকাশ করে তাদের ফাইল বছরের পর বছর জুড়ে পড়ে থাকে। এ কর্মকর্তারা বিগড়ে গেলে কাগজের মারপেঁচে মালিকানা জমি খাস খতিয়ানে ফেলে উচ্ছেদ অভিযান ও চালায়।

রাজধানীতে এক ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার কাছে জায়গা বরাদ্দের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১০ লাখ টাকা ঘুস চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মিরপুর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।, ঢাকা ডিভিশন-১ এর অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা হলেন রাদিউজ্জামান ও তৌফিকুল ইসলাম। তারা শুধু ঘুস চেয়ে ক্ষ্যান্ত হননি, নিজেদের সরকারদলীয় লোক ও একটি ‘একটি বিশেষ জেলার’ বাসিন্দা হিসেবে প্রতিনিয়ত জাহির করতেন ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে। এরা দুজনই মিরপুর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা ডিভিশন-১ এর উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। আর ভুক্তভোগী ওই মুক্তিযোদ্ধার নাম জাফর উল্লা মজুমদার আজাদ। তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফর উল্লা মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, দুদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে জাফর উল্লা বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মিরপুর-৬ নম্বরের বি ব্লকের ৫ নম্বর লেনের একখণ্ড খালি জায়গা বসবাসের জন্য বরাদ্দ পাওয়ার উদ্দেশে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করি।

এ আবেদনে সুপারিশ করেন মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রীসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে মিরপুর জাতীয় গৃহায়নের ঢাকা ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে মিরপুর-৬ নম্বরের ওই খালি জায়গার বিস্তারিত অবস্থা সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মিরপুরের গৃহায়নের অফিস থেকে ওই প্রতিবেদন চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে পাঠানো নিয়ে শুরু হয় নানান টালবাহানা।কয়েকমাস অতিবাহিত হলেও মিরপুরের গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিবেদন পাঠায়নি।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বহুবার মিরপুর গৃহায়নের কার্যালয়ে গিয়েও কাজ হয়নি। তাদের অনেক অনুরোধ করি, কিন্তু এতে কাজ হয়নি। একপর্যায়ে ২৩ নভেম্বর মিরপুর গৃহায়নের ওই অফিসের দুই কর্মকর্তা রাদিউজ্জামান ও তৌফিকুল ইসলাম তাদের রুমে আমাকে ডেকে নিয়ে ১০ লাখ টাকা ঘুস চান। আর তারা বলেন, ১০ লাখ টাকা দিলে এক সপ্তাহের মধ্যে হেড অফিসে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেবেন।

মুক্তিযোদ্ধা জাফর উল্লা বলেন, এ প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য মাসের পর মাস মিরপুর গৃহায়নের অফিসে ধর্ণা দিয়েছি। শেষমেশ ওই দুই কর্মকর্তা ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। 
তিনি বলেন, মিরপুরের এ অফিসে ঘুস ছাড়া কোনো কাজ হয় না। টপ টু বটম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। অনেক কর্মকর্তা ঘুরে ফিরে এখানে ৩-৪ বার বদলি হয়ে এসেছেন এই মিরপুরে। এদের মধ্যে অনেক কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয় ও গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। আবার অনেকে এক সময় ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন বলেও পরিচয় দেন। অথচ তারা জানেন না যে তারা সরকারের কর্মচারী। আর আমার মতো সাধারণ মানুষের সেবক। এ অফিসে নির্মাণ রিপোর্ট, ফ্ল্যাট নির্মাণ রিপোর্ট, হস্তান্তরপত্র, বাস্তব দখলপত্র, পুনর্বাসন প্লট, আবাসিক প্লট, ছাড়পত্র, দুইটি প্লট একত্রে কাজ করার অনুমতিপত্র পেতে হলে লাখ লাখ টাকা ঘুস দিতে হয়। আর ঘুস ছাড়া যে এখানে কাজ হয় না- তা অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। আমার মতো অনেক ভুক্তভোগীও এ ঘটনার সাক্ষী। 
এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ঘুসখোর ওই অফিসাররা আমাকে বলেন- আপনি যে জায়গা বরাদ্দ নিতে চান তার দাম ২ কোটির মতো। এত দামী জায়গা বরাদ্দ নিতে হলে আপনাকে ১০ লাখ টাকা খরচ করতে হবে।আপনি মুক্তিযোদ্ধা দেখে রেট কম। তা না হলে অনেক টাকা লাগত। মুক্তিযোদ্ধা জাফর উল্লা আরও বলেন, আমার মাথা গোজার ঠাঁই নাই। দেশ স্বাধীন করেছি কি এই ঘুসখোরদের জন্য? আমাদের কষ্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বোঝেন। স্বাধীন দেশে এ ঘুসখোরদের দেখতে চাই না। ঘুস চাওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি অস্বীকার করে কর্মকর্তা রাদিউজ্জামান বলেন, (মুক্তিযোদ্ধা)র কাছে ঘুস চাইছি কিনা- সেই বাস্তব অবস্থাটা জানতে হবে। কবে ঘুস চাওয়া হয়েছে ডেটও জানতে হবে। এ ধরনের কাগজ জমা পড়েনি। আবার তার সর্বশেষ অবস্থা কী- তাও জানতে হবে। তবে কারো কাছে ঘুস চাওয়া হয়নি।

অভিযুক্ত তৌফিকুল ইসলামও ঘুস চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধার কাজে ঘুস চাইনি। এটা মিথ্যা ও বানোয়াট। তাকে (মুক্তিযোদ্ধা জাফর উল্লা) সঙ্গে নিয়ে আসুন। এ ব্যাপারে মিরপুর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী বলেন, আমার অফিসে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে আলাদা চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। আমার মনে হয় না আমি আসার পর এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখব। ঘটনা সত্যি কিনা। যদি কেউ জড়িত থাকে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
 

 

সর্বশেষ - রাজনীতি