(বাংলাদেশ একাত্তর.কম) আফজাল হোসেন ।
পুলিশ স্বামীর বিচার চেয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন সব হারানো রিপা
নাম রিপা আক্তার সুমি। বয়স ২২। শৈশবে মা’কে হারান। জন্মদাতা পিতা যেন থেকেও নেই। সৎ মায়ের সংসারেও ঠাঁই হয়নি বেশিদিন।
এরপর মায়ের দিকের এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় অনাথ রিপার ঠাঁই হয় কলকাতার একটি আশ্রমে । সেখানে শৈশব ও কৈশর পেরিয়ে এক সময় বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ঢাকায় এসে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেন।
রিপার জীবনের করুণ কাহিনি প্রচার হয় ঢাকা এফএম ৯০.৪-এ আরজে কিবরিয়ার ”জীবন গল্প” শোতে । এফএম রেডিওতে প্রচারিত আরজে কিবরিয়ার এই শো দেখে পুলিশের এক কনস্টেবলের সাথে মুঠোফোনে আলাপচারিতা হয় রিপার। পুলিশ সদস্যের নাম মোঃ সোহেল রানা (পুলিশ কনস্টেবল, বিপি নং-৯৬১৫১৮৭৯৮৭) । চাকুরির সুবাদে ওই কনস্টেবল থাকতেন মিরপুর ১৪ নম্বর কাফরুল এলাকার পুলিশ কোয়ার্টারে। পুলিশ কনস্টেবল মোঃ সোহেল রানা আলাপচারিতার একপর্যায়ে সহযোগিতার আস্বাস দিয়ে রিপাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন । বিয়ের আগে রিপা তার জীবনের সব ঘটনা খুলে বলেন হবু স্বামীকে। জেনে শুনে ওই পুলিশ সদস্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫ লাখ টাকার কাবিনে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করেন। বিয়েতে দুপক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলো।
বিয়ের পর স্বামী – স্ত্রী মিলে মিরপুর ১৪ নম্বর কাফরুলে একটি ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেন। এর মধ্যে চার মাস সুখে শান্তিতে সংসার ভালোই চলছিল। এরপর হঠাৎ সব কিছুই যেন বদলে যায়। রিপার স্বামী ও তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। যৌতুকের জন্য মাঝেমধ্যে স্বামীর পিটুনিও খেয়েছেন। সংসার টিকিয়ে রাখতে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সব অত্যাচার মুখ বুজে নীরবে সহ্য করতেন। সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য স্বামীকেও বুঝাতেন ।
দেখতে সুদর্শন হওয়ায় এরই মধ্যে এক তরুনীর সাথে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কে জড়ান রিপার পুলিশ স্বামী। পরকীয়ার জেরে সংসারে শুরু হয় অশান্তি। এক পর্যায়ে যৌতুকের দাবিতে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয় হতভাগী রিপাকে। ওই সময় কাফরুল থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলেও কর্তব্যরত পুলিশ মামলা কিংবা জিডি নেয়নি। উল্টো অভিযোগকারীর সাথে বৈরি আচরণ করেন ।
পরবর্তিতে পুলিশ স্বামীর বিচার চেয়ে ১১ তারিখ বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রিপা । এ ব্যাপারে ন্যায় বিচারের স্বার্থে ডিএমপি কমিশনারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ভুক্তভোগী রিপা ।

সোহেল রানার বিরুদ্ধে ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগের কপি।
রিপা আরো জানান, আমার স্বামী মোঃ সোহেল রানা বিয়ের কিছুদিন পরই তার পিতার প্ররোচনায় আমার নানা বাড়ির সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া একটি আর ১৫ মোটরসাইকেল কিনে দিতে চাপ দেয়। আমি অপরাগতা প্রকাশ করলে সে আমার সাথে বিভিন্ন সময় খারাপ আচরন করেন। সংসারের সব খরচ বন্ধ করে দেয়। সংসার করার জন্য তাকে অনেক বুঝিয়েছি। সে সংসার করবে না তালাক দিবে এ জাতীয় কথা বলে ভয় ভীতি দেখায়। এক পর্যায়ে মামলার ভয় দেখিয়ে মারধোর করে বাসা থেকে বের করে দেয়।এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি কিংবা মামলা করতে গেলে পুলিশ সহযোগিতা না করে উল্টো খারাপ আচরন করে।
রিপা এ প্রতিবেদককে জানান যে, বিয়ের ৬ মাস পর তিনি অন্তঃস্বত্তা হয়ে পড়েন। এ সময় তার স্বামী বিভিন্ন ঔষধ এনে খাওয়াতো। ঔষধ খাওয়ানের সময় জোড়াজোড়ি করতো। বলতো বাচ্চার ভালোর জন্য এ ঔষধ খেতে হবে। একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তারের কথা শুনে বুঝতে পারি আমাকে যে ওষধ খাওয়ানো হয়েছে তা বাচ্চা নষ্ট করার জন্য। এ নিয়ে জিঞ্জাসাবাদের মুখে সে নিজের দোষ স্বীকার করেন। এরপর সান্তনা দিয়ে বলে একসাথে থাকলে আবারো বাচ্চা নেয়া যাবে।
রিপা বলেন তিনি এখনও স্বামীর সংসার করতে চান। স্বামী ছাড়া পৃথিবীতে তার আপনজন বলতে কেউ নেই। স্বামীকে তালাক দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন তালাক দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সোহেল রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন রিপা বর্তমানে আমার কেউ নন। সে আমাকে তালাক দিয়েছে। তার ব্যাপারে কথা বলে লাভ নেই। তালাকের কপি দেখানো যাবে কিনা জানতে চাইলে বলেন হাইকোর্ট থেকে তালাক দিয়েছে। কপি দেখানো যাবে না। যে তালাক দিয়েছে তার কাছে জিঞ্জাসা করেন । তার কাছে কপির অভাব নেই।