ঢাকা-১৬ আসনে সন্ত্রাসের রাজত্ব: বস্তি ও ক্যাম্পে চাঁদাবাজ-অস্ত্রবাজের নিরাপদ আস্তানা, বিএনপি-যুবদলের দখলে রিকশাচালক ও সাধারণ মানুষ জিম্মি
ঢাকা, মিরপুর প্রতিনিধি: ১৩ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর ঢাকা-১৬ আসনে (পল্লবী-রূপনগর) বস্তি ও বিহারিদের ক্যাম্প এখন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ—বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা একে একে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বাউনিয়াবাধ, কলাবাগান, কালাপানি, ঝিলপাড়, মুরগিপট্টি, শিয়ালবাড়ি, চলন্তিকা মোড়, সিরামিক উতর কালসীসহ অন্তত এক ডজন বস্তি ও ক্যাম্প।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব এলাকায় আগে আওয়ামীপন্থীদের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও বর্তমানে বিএনপি-যুবদলের দখলে চলে গেছে। আর এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে দলীয় গ্রুপের মধ্যেই শুরু হয়েছে সহিংস সংঘর্ষ।
সম্প্রতি রূপনগর থানা সংলগ্ন এক ঘর দখল নিয়ে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী মবিন পুলিশের সামনেই ঘরের মালিকানা দাবি করেন এবং বলেন, “ঘর আমি কিনেছি। যারা দখল করতে এসেছিল, তাদের তাড়িয়ে দিয়েছি। পুলিশ স্ট্যাম্প দেখে আমাকে সাপোর্ট দেয়।”
অন্যদিকে, রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শামীম ও লিটন গাজীর বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজি, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ।
ভিডিও বক্তব্যে এক রিকশাচালক জানান, চাঁদা না দেওয়ায় সেচ্ছাসেবক দলের লিটন গাজী ও শামীম মিলে তাকে মারধর করে হাত ভেঙে দেয়। তিনি বলেন, “ঘুমিয়ে ছিলাম, এসে আমাকে মেরে বলে, তোর গ্যারেজ চালানোর ট্যাক্স দে। না দিলে হাত ভাঙব।” পরে তার হাতে মারধরের আলামত পাওয়া যায়। তিনি ভয়ে থানায় অভিযোগও করতে পারেননি।
আরেক রিকশাচালক জানান, শামীম তার রিকশায় তালা মেরে দিনের পর দিন আটকে রাখে এবং ‘চা-নাস্তার টাকা’ না দিলে ছাড়ে না। এভাবেই দৈনিক রিকশাচালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। ভিডিও লিং
এছাড়া, মাদকবাণিজ্যে জড়িত থেকে কারাভোগের পর ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত মানিক মিরাজ পল্লবীর লালমাটিয়া টেম্পোস্ট্যান্ডে চাঁদা না দেওয়ায় এক দোকানে ঢুকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে বাউনিয়াবাধ-লালমাটিয়ায় একটি সুসংগঠিত ছিনতাইকারী চক্র গড়ে উঠেছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন পল্লবী-রূপনগরে ছিনতাই, চুরি ও হামলার ঘটনা ঘটছে। থানায় অভিযোগ করলে উল্টো হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা।
এক কিশোর জানায়, “মিরপুর-৬ কাঁচাবাজারের সামনে আমাকে মেরে সব নিয়ে যায়। থানায় গেলে উল্টো হুমকি দেয়, মামলা না করার জন্য।”
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে শামীম বলেন, “ঘটনা পুরনো। ওই দিন আমি মানিকগঞ্জে ছিলাম। মারধরের অভিযোগ মিথ্যা। একটা পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
তবে বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীদের সঙ্গে চাঁদাবাজ যুবলীগ নেতা শরীফ মাতবরের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি জানতাম না সে যুবলীগ করে। আমি ব্যবসায়ী মানুষ। ব্যবসার টাকা রাজনীতিতে খরচ করি, চাঁদাবাজি করি না।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি ভয়ংকর চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
রূপনগর ও পল্লবী থানা প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।