আনিছুর-আজিজার চক্রের’ তাণ্ডবে এলাকা ছেড়ে পালাল নিরীহ পরিবার, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ
প্রতিবেদক | দিনাজপুর | প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫
দিনাজপুরের পার্বতীপুরে আদালতের রায় উপেক্ষা করে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র তাণ্ডব! প্রভাবশালী একদল রাজনৈতিক ছত্রছায়াপ্রাপ্ত দুর্বৃত্ত ‘মসজিদে জমি দানের’ নামে ধর্মের মুখোশ পরে জমি দখলের নতুন কৌশলে মেতে উঠেছে। এনামুল হক সরকারের পরিবার এখন জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ফেলে আত্মগোপনে।
ঘটনার মূল হোতা—আনিছুর রহমান ও আজিজার রহমান নামের দুই ভাই, যাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে এক ভয়ঙ্কর ভূমিদস্যু চক্র। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছে আজিজারের ছেলে মোঃ সাদেকুল ইসলাম, জিকরুল হক ওরফে জিকু, আরজু বেগম এবং সুলতানা বেগম। প্রত্যেকেই এই চক্রের সক্রিয় সদস্য। এলাকাবাসী জানায়, এরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের ছায়ায় থেকে ভয়ভীতি, হুমকি, হামলা ও জমি দখলের মতো অপকর্মে লিপ্ত।
গত ৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখ রাত পৌনে ১০টার দিকে ভূমিদস্যুদের সহযোগী আরমান ওরপে জুয়ারী আরমান ১৫-২০ টা মোটরসাইকেল যোগে ৩০-৪০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে ভুক্তভোগীর ভাই সাজিদুলের বাড়ীতে এসে শাসিয়ে যায় জমি দখল নিবে এবং কোর্টের মামলা তুলে নিতে তিন দিন সময় বেঁধে দেয়।মামলা তুলে না নিলে পরিবারে কেউ জীবিত থাকবেনা বলেও হুমকি দেয় আরমান বাহিনী।
২০২৪ সালের ১ আগস্ট, সকাল ৭টার দিকে এই চক্রের সদস্যরা হাসুয়া, ছুরি, রড ও লাঠি নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। গন্তব্যে পৌঁছামাত্রই রাসেল মিয়াকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয় এবং তার স্ত্রী গোলাপী বেগমকে নৃশংসভাবে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হাড় ভেঙে ফেলে। নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতেও কুণ্ঠা বোধ করেনি তারা। এরপর ছিনিয়ে নেয় দুধ বিক্রির ৬৫ হাজার টাকা।
আদালতের রায়ে জমির মালিকানা পায় ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্তু তা মানতে নারাজ আনিছুর-আজিজার চক্র। দখলের নতুন চাল হিসেবে তারা এখন মসজিদের নাম ভাঙিয়ে জমি ‘ওয়াকফ’ করার চাপ দিচ্ছে। ভয়াবহ তথ্য হলো—স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতিও লোভে পড়ে এই ষড়যন্ত্রে তাদের সহযোগী হয়ে উঠেছেন।
বাদী এনামুল হক সরকার বলেন:
“আদালতের রায় পেয়েও এখন আমরা আত্মগোপনে। ওই ১৬ শতাংশ জমিই আমাদের শেষ সম্বল। আনিছুর-আজিজার গ্যাং প্রতিদিন হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে লাশ গুম করে দেবে—এই তাদের ভাষা।”
স্থানীয়রা জানায়, এই গ্যাং বিগত ১৭ বছর ধরে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে অবৈধ টাকা ও প্রভাব গড়ে তুলেছে। এমনকি এলাকার কিছু বিএনপি নেতাও সুবিধাভোগী হয়ে তাদের পক্ষ নিচ্ছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে ১৪৩/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৫০৬(২)/১১৪ ধারায় চার্জশিট দাখিল হলেও তারা জামিনে বের হয়ে পড়েছে আরও হিংস্র হয়ে। প্রশাসনের নিরবতা ও রাজনৈতিক আশ্রয়ে এরা দিন দিন হয়ে উঠছে অপ্রতিরোধ্য।
এখন প্রশ্ন—কোর্টের রায় যখন মানা হয় না, তখন সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? ধর্মের অপব্যবহার করে জমি দখলের এমন জঘন্য অপরাধ বন্ধে এখনই প্রশাসন, র্যাব এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে ‘আনিছুর-আজিজার গ্যাং’-এর মতো অপরাধীরা বারবার মানুষকে আইনের চোখ রাঙিয়ে যাবে।
বাদী এনামুল হক সরকার ও ভাতিজা (এসএসসি পরীক্ষার্থী)-এর কণ্ঠে অসহায় আর্তনাদ:
“জন্মভিটা রক্ষা করতে গিয়ে আজ আমার পরিবারকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিলেও সেই রায় মানছে না আনিছুরদের মতো দানবরা। ওরা টাকার জোরে, রাজনৈতিক প্রভাবে সব কিছু মুছে দিতে চায়। আমি বিচার চাই—এই ভূমিদস্যুদের হাত থেকে আমাদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে চাই। আমরা আর কিছু চাই না, শুধু আমার বাবা-দাদার ভিটাটা ফেরত চাই। এখানেই আমার শিকড়। ওটা হারালে আমরা শেষ হয়ে যাব।”