রাজু আহমেদ: প্রকাশ, ২২ মে ২০২৫
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার সাহসিকতার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নিয়ে এই বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন তিনি।
সভায় শুরুতেই সেনাপ্রধান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দায়িত্ব পালনরত সেনা কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “এখন সময় রাজনৈতিক সরকারের দেশ পরিচালনার। করিডোর, বন্দর বা কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের। সেনাবাহিনী কোন অনানুষ্ঠানিক করিডোর বা ছাড় দেওয়ার নীতিতে যাবে না।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো বিদেশি দূতাবাস বা গোষ্ঠীর প্ররোচনায় সেনাবাহিনী পরিচালিত হবে না।
সেনাপ্রধান জানান, ” ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়া জরুরি, ১ জানুয়ারি থেকে একটি নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করুক।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, হঠাৎ করে বিদেশ থেকে কেউ এসে রাষ্ট্রের সংবেদনশীল বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জাতিসংঘের জুলাই-আগস্ট রিপোর্ট সম্পর্কে সেনাবাহিনীকে না জানানো নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। “যখন জাতিসংঘ জানায় তারা সরকারকে জানিয়েছে কিন্তু সরকার সেনাবাহিনীকে জানায়নি—তখন প্রশ্ন থেকেই যায়,” বলেন তিনি।
তিনি স্বীকার করেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা আন্তরিক হলেও সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। সেজন্য দেশের জন্য একটি রাজনৈতিক সরকারই একমাত্র পথ। এক পর্যায়ে সেনাপ্রধান বলেন, “আমার দায়িত্ব কেউ নিতে চাইলে, দয়া করে নিয়ে নিন।”
সেনাপ্রধান আরও জানান, তার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। তবে স্বীকার করেন, এখনও প্রমোশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে।
তিনি সতর্ক করেন, বর্তমান প্রশাসনের অসতর্কতা বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে একটি “প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রে” পরিণত করছে, যেখানে বিদেশি শক্তিরা নিজেদের স্বার্থে মাঠে নামতে পারে।
এসময় একজন কমান্ডিং অফিসার বলেন, “স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদ খর্ব হয়—এমন কিছু সেনাবাহিনী কখনও মেনে নেবে না।” উপস্থিত অফিসারগণ একমত হয়ে জানান, তারা সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে তাঁর কমান্ড অনুসরণে প্রস্তুত।
সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এখন থেকে আরও কঠোর হবে বলে জানানো হয়। অরাজকতা, রাস্তায় মব তৈরি ও সহিংসতা আর কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলেও স্পষ্ট বার্তা দেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সংস্কার বিষয়ে প্রস্তাব দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
অবশেষে সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনী নির্বাচনের পরে স্বাভাবিক নিয়মে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে যাবে, তবে প্রয়োজনে বেসামরিক প্রশাসনকে কয়েক মাস সহায়তা করতে পারে। এ বছরের বাকি সময়ের জন্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বন্ধ রাখার নির্দেশও দেন তিনি।