থানায় প্রেমিক-প্রেমিকার ‘রোমান্স’, বাইরে সমন্নয়কদের হামলা, উত্তপ্ত রূপনগর।
রাজু আহমেদ| প্রকাশ, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
ঢাকা, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ — রাজধানীর রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় প্রেমসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষ, পুলিশের উপর হামলা এবং থানা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসন শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়। এ ঘটনায় প্রেমিক-প্রেমিকা সহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে রূপনগর ১২ নম্বর রোডে এক প্রেমিক তার পুরনো প্রেমিকার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। বাধা পেয়ে প্রেমিকা বিষয়টি তার নতুন প্রেমিক এবং পরিচিত সমন্বয়কদের জানালে তারা এসে ঐ প্রেমিকের উপর চড়াও হয়। প্রকাশ্যে মারধরের পাশাপাশি তার মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া হয়।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে সমন্বয়করা জানায়, “এটা আমাদের ইস্যু, আপনারা চলে যান।” এক পুলিশ সদস্য বলেন, “তাহলে তার মানিব্যাগ-মোবাইল ফিরিয়ে দিন।” তখন তর্ক শুরু হয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য টুটুল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে এসে সমন্নয়কদের শান্ত থাকতে এবং পুলিশের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করতে বলেন। কিন্তু এতে সমন্নয়করা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং টুটুলকে মারধর শুরু করে।
টুটুল বলেন, ওরা চারপাঁচজন মিলে একজনকে মারতে দেখছিলাম। ওদের মধ্যে একজন মাহিম ছিলো। পুলিশও তখন দাঁড়িয়ে ছিলো। আমি বললাম, ‘তোমরা এটা কেন করছো?’ তখনই তারা আমাকে মারধর শুরু করে।”
পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলে সমন্বয়করা পুলিশের দিকেও আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করে। আরও কিছু লোক লাঠিসোটা নিয়ে এসে টুটুলকে মারধর করে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ হারালে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা সহ চারজনকে আটক করে এবং থানায় হস্তান্তর করে।
তবে সেখানেই থেমে থাকেনি ঘটনা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রূপনগর থানা চত্বরে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পুরো থানা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাত্ররা থানার প্রধান ফটক ভাঙারও চেষ্টা করে।
ঘটনার মামলা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বিএনপির নেতারা মামলা করার প্রস্তুতি নিলেও ছাত্র পক্ষই পরে বাদী হয়ে মামলা করবে বলে জানায়। এসময় প্রেমিকা তার নতুন প্রেমিককে নিয়ে ওসির কক্ষে খোশগল্পে মেতে ছিলেন বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
রাত ৩টার দিকে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যেতে চাইলে ছাত্ররা আবার তাদের থানা চত্বরে ফিরিয়ে আনে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হলে তারা কোনো উত্তর না দিয়ে লজ্জায় থানার ভেতরে চলে যান। তবে হামলাকারী সমন্নয়করা ও ত্রিভুজ প্রেমিক প্রেমিকার নাম পরিচয় জানা যায়নি।
রাত ৩টা ২০ মিনিটে মাহিম নামে এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ২০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে বিএনপির দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক বলেন, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে আনুক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর রাজনৈতিক অঙ্গনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট মহল আশঙ্কা করছে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি আরও বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে।