“দায়িত্বে যখন স্বরাষ্ট্র, ১০ লাখে চলে না”—নতুন বার্তার সম্পাদকের পোস্টে ভাইরাল ব্যঙ্গ, উত্তাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা | শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এক নারী সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ‘সমন্বয়ক পরিচয়ধারী’ পাঁচ যুবক হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি (সরকারি কমিশন সদস্য)’ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রভাব বিস্তার করে চলছিলেন।
শনিবার সন্ধ্যা ৮টার দিকে গুলশান ৮৩ নম্বর রোডের সাবেক এমপি সাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদার বাকি অংশ এবং স্বর্ণালঙ্কার নিতে গেলে বাসার লোকজন গুলশান থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:
১. আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ (২৫) — নোয়াখালীর সেনবাগের বাসিন্দা, বর্তমানে ধানমন্ডির নিউ মডেল এলাকায় বসবাসকারী, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ পরিচয়ধারী।
২. মো. সাকাদাউন সিয়াম (২২)
৩. সাদমান সাদাব (২১) — নাটোরের লালপুরের বাসিন্দা
৪. ইব্রাহীম হোসেন (২৪) — চাঁদপুরের রামদাসদী গ্রামের বাসিন্দা
৫. মো. আমিনুল ইসলাম (১৩) — বাড্ডার আলাতুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, “কয়েকদিন আগে সাবেক এমপি সাম্মী আহমেদের বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। বাসায় না থাকায় তার স্বামীর কাছে এই টাকা দাবি করেন অভিযুক্তরা। এর মধ্যে তারা ১০ লাখ টাকা নিয়ে যায়। আজ তারা বাকি টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিতে এলে আমরা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করি।”
ব্যঙ্গ ও বিতর্ক:
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন অভিযুক্ত রিয়াদ। কারণ, তিনি ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে বহু জায়গায় দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। তার গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নতুন বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ইউসুফ আহমেদ তুহিন একটি ব্যঙ্গাত্মক ফেসবুক পোস্টে লেখেন,
“যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, তিনি মাত্র ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন? এটা তো অসম্মানজনক! কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার চাঁদা নেওয়া উচিত ছিল!”
এই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কেউ বলেন, “সত্যি কথা বলেছেন সম্পাদক সাহেব!”, আবার কেউ বলেন, “ছাত্র প্রতিনিধির নামে অপকর্মের পাহাড়—দ্রুত বিচার দরকার।”
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, রিয়াদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নাম ভাঙিয়ে নিজেকে কমিশন সদস্য ও সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “ছাত্র পরিচয়ে এমন ভয়াবহ অপরাধ প্রমাণ করে, কত সহজেই ক্ষমতার ভান তৈরি করে মানুষ ঠকানো যায়। প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি রুখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর হতে হবে।”