রবিবার , ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ সংবাদ
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সাহিত্য

সাংসদ একাই এক শ!

প্রতিবেদক
bangladesh ekattor
ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭ ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মোট ওয়ার্ড ৯০টি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক ওরফে ডিউক চৌধুরী সব ওয়ার্ডে একাই দলীয় কমিটি গঠন করেছেন।

এই অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক ওরফে টুটুল চৌধুরীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ৭৩টি ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা গত ৭ থেকে ১৫ নভেম্বর বিষয়টি দলের জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদককে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘অভিযোগগুলো পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’

লিখিত অভিযোগে টুটুল চৌধুরী বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে এই উপজেলার কোনো ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়নি। বর্তমান সাংসদ তাঁর রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ঘরে বসে গোপনে ৯০টি ওয়ার্ডেই দলীয় কমিটি গঠন করেছেন। এতে আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতা-কর্মীরা স্থান পাননি। স্থান পেয়েছেন জামায়াত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও কতিপয় অরাজনৈতিক অসৎ লোক। কমিটিগুলো গঠনের বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা এমনকি কর্মীরাও জানতেন না।

টুটুল চৌধুরী প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাংসদের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি একাই এক শ। স্থানীয় জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন। সাংসদের মায়ের খালাতো ভাই উপজেলা জামায়াতের আমির এ টি এম শাহ মুহম্মদ রোস্তম আলী। রোস্তমের ফুফাতো ভাই যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। এ কারণে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাংসদের ব্যাপক সখ্য।

তবে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সাংসদ ডিউক চৌধুরী স্থানীয় জামায়াতের কোনো নেতার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, দলে জামায়াত-শিবিরের কেউ ঢুকে পড়লে তিনিই ব্যবস্থা নেবেন। সাংসদ উল্টো অভিযোগ করেন, টুটুল চৌধুরী সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অনিয়মসহ বিভিন্ন রকম কথা বলছেন।

কালুপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করে জামায়াত ও বিএনপির স্থানীয় লোকজন নিয়ে গোপনে আমার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেছেন এমপি।’

রাধানগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাবুদ বলেন, সাংসদের নির্দেশে এই ওয়ার্ডে এবার সভাপতি করা হয়েছে মুছা মণ্ডলকে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে শরিফুল ইসলামকে। মুছা জাতীয় পার্টির ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন। আর শরিফুল ছিলেন জামায়াতের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য। শরিফুলের পুরো পরিবার জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাছানুর আলীকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে।

একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেলজার হোসেনের অভিযোগ, এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন শাখার সহসম্পাদক আইয়ুব আলীকে আর জাতীয় পার্টির ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান দুলুকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে।

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কৈলাস চন্দ্র রায় লিখিত অভিযোগে বলেন, এমপি ডিউক চৌধুরীর করা কমিটির সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সম্পর্ক নেই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র মোতাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করেছেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের দুজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। কাজেই কমিটি গঠনে আমার সম্পৃক্ততা ছিল না।আরগোপীনাথপুর, বিষ্ণুপুর ও দামোদরপুর ইউনিয়নে এখনো ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়নি।’

আরও যত অভিযোগ

রামনাথপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই প্রামাণিক বলেন, এই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি নুর আলমকে।

লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি কৈলাস চন্দ্র রায় বলেন, এই ওয়ার্ডের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রশিদকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। এই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদের অভিযোগ, এখানে নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে জামায়াতের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য সুলতান মিয়াকে। তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরাও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির ওয়ার্ড সহসভাপতি দিলীপ চন্দ্র রায়কে ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন কমিটির সদস্য জয়নাল হোসেনকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে।

কুতুবপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের সমর্থক রবিউল ইসলামকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শাহানুর আলম।

কালুপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন অভিযোগ করেন, এই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াতের সদস্য শফিকুল ইসলাম এবং বিএনপির সহসভাপতি আবদুল হাকিমকে আওয়ামী লীগের সহসভাপতি করা হয়েছে। এ ছাড়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে জামায়াতের ওয়ার্ড কমিটির নেতা আবদুস সামাদের ছেলে মোখলেছার রহমানকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালুপাড়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ওয়াদুদ আলী সরকার, প্রচার সম্পাদক জাহেদুল হক সরকার ও কার্যনির্বাহী সদস্য পদে মশিউর রহমানকে। তাঁদের মধ্যে মশিউর ও জাহিদুল কালুপাড়া ইউনিয়নের শান্তিরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ওয়াদুদ আলী স্থানীয় ডাঙ্গাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাঁরা তিনজনই কমিটিতে নাম থাকার বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সভাপতি ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মোকছেদুল হককে। কিন্তু তিনি কখনো আওয়ামী লীগ করেননি। তিনি জামায়াতের সমর্থক।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সাংসদ গত ইউপি নির্বাচনে বদরগঞ্জ উপজেলার কালুপাড়া, রাধানগর, গোপীনাথপুর, মধুপুর ও রামনাথপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। সাংসদ এলাকায় এলেই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁর সঙ্গে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে অভিযোগ সত্য হলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ - রাজনীতি