বাংলাদেশ একাত্তর- নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ
মোঃপুর ও মিরপুরে খেলার মাঠ এখন মার্কেট! ঢাকা শহরের প্রায় স্থানেই ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণ ও উত্তরে দেখা যায় মেলার নাম করে বার মাসই দোকান বসিয়ে চাঁদা তুলছে একদল চক্র। রাজধানীর মোহাম্মদপুর জাকির হোসেন রোড খেলার মাঠে অনুরূপ চলছে শিশু কিশোরদের খেলার মাঠ দখল করে চাঁদাবাজির ব্যবসা।
দেখা যায় পুরো মাঠটি দখল করে রেখেছে একটি চক্র।মাঠটিতে বসিয়েছে অসংখ্য দোকান পাট, মাঠে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে অবস্থিত তিনতলা ভবনে একাধিক সাইবোর্ড ব্যানার টানানো। ২য় তলায় লেখা জাকির হোসেন রোড ক্রীড়া চক্র ও সমাজ কল্যান সমিতি এবং ৩য়-তলায় (muscle plus gym) এমনটিই লেখা।।প্রতিদিন তুলছে চাঁদা। আর সেই চাঁদার পরিমান ও নেহায়েত কম নয়।
সরজমিনে দেখা যায় যে, প্রতি দোকান থেকে অবৈধভাবে চাঁদা তুলছে দুজন যুবক। মাঠের ভিতর পিঁপড়ার সারির মত করে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে। দোকানদারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। ১০০০ টাকার ভিতরেই বিদ্যুৎতের টাকা , পুলিশের টাকাসহ।
এ মাঠ দখল মার্কেটে পাওয়া যায়, মহিলাদেরই সকল প্রকার কাপড় ও সাজগোজ মেকআপ বক্সসহ ছোট বড়দের সব কিছুই। মাঠের তিন পাশে রোড। মার্কেট চলা কালীন যানজট লেগেই থাকে এলাকায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সারা দিন কাজ শেষে বাড়ী ফিরে সন্ধাকালীন সময় যে ছেলে মেয়ে ও পরিবার নিয়ে একটু মাঠে হাটা হাটি করবো বা বাচ্চাটাকে একটু খেলাধুলার চর্চা করাবো তা আর পারছিনা
সত্তর উর্ধে বয়স হালিম চাচা বলেন, বয়ষের ভারে নানা রোগে আক্রান্ত ডাঃ বলছে মাঠে সকাল বিকাল হাটা-হাটি করতে। বাসার কাছে মাঠ কিন্তু এখন মার্কেট হওয়াতে ঘরেই সময় কাটাতে হয়। এলাকাবাসিরা আরও বলেন, আমাদের জাকির হোসেন রোডে এই মাঠটিই ছিলো একমাত্র খেলার স্থান।
কিন্ত এলাকার প্রভাবশালীরা মাঠে অবৈধভাবে মার্কেট বসিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছে। অন্যদিকে আট বছর বসয়ী ঝিলিক বলে, আমি আম্মুর সাথে বিকাল হলে এই মাঠে ক্রিকেট খেলতাম কিন্ত এখন আর ক্রিকেট খেলা করতে পারিনা, মাঠ এখন মার্কেট হওয়াতে।
মাঠের দোকান্দারদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, দোকান বসালেই প্রায় এক হাজার (১০০০) টাকা করে দিতে হয়। দোকানের সংখ্যা কত জানতে চাইলে বলেন প্রায় দুই থেকে তিন’শ হবে। দৈনিক, দুই আড়াই হাত খেলার মাঠের জমি ভাড়া দিতে হয় সব মিলিয়ে এক হাজার টাকা আরও তো নিজের খরচ।
এলাকা বাসিরা ক্ষমতাসীনদের ভয়ে কেউ টু শব্দ করতে পারেনা। ঘরে বোবা হয়ে স্টার জলসা দেখা ছাড়া আর উপায় কি? মাঠের আরেক দোকানদার বলেন, এলাকার টোকাই নেতা থেকে উপর মহল পর্যন্ত এই চাদার ভাগ পায়। ক্লাবের নামসহ বিদ্যুৎ পানি, পুলিশ,ঝাড়ুদার,সুইপারসহ সকলের কথা বলে টাকা নেয়।
মাঠ দখল করা মার্কেটে – কেনা-কাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা বেশির ভাগ নারী। মোঃপুর টাউন হল মার্কেট হয়ে লাল মাটিয়া মহিলা কলেজ রোডে প্রবেশ মুখে সন্ধার পর থেকেই যানজটে আটকে পড়ে ভিষণ বিপাকে পড়তে হয় এলাকাবাসীদের। খেলার মাঠে দোকানে কিনতে আসা নারী ক্রেতা শামাীমা বলেন, এখানে অনেক দোকান কিন্তু দামটা একটু বেশি তাই কিছু কিনতে পারিনি।
এ চিত্র যে শুধু জাকির হোসেন খেলার মাঠে তা কিন্ত নয়। এমন আরও মাঠ ঢাকা সিটি দক্ষিণ ও উত্তরে অনেক।
ঢাকা সহরের একটুকরো জমি হিরার চেয়েও দামী তাই ক্ষমতাসীনরা পারলে তো সকল খেলার মাঠ-ই দখল করে নানা উন্নয়ন মুলুক সংগ`ঠনের নাম দিয়ে বিক্রি করে দিত।
যেমনটি দেখা যায়, মিরপুর পল্লবী,ব্লক সি-১৭ নম্বর রোডে অবস্থিত শিশুদের খেলার মাঠ এলাকার ক্ষমতাসীনদের দখলে। মাঠের ভিতর গড়ে উঠছে ছোট ছোট ঘর-বাড়ীও।
এখানেই শেষ নয় আরও দেখে মাথা ঘরে যায় মিরপুর পল্লবী ব্লক-সি, ৬-নম্বর রোডে যার যার বাড়ির সামনে শিশুদের খেলার মাঠ তাদের নিয়ন্ত্রণে তালাও মেরে রাখেন, কেউ কেউ দখল করে ভাড়া ও দিয়েছেন রিক্সার গ্যারেজ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বীর মুক্তিযুদ্ধা বলেন, মিরপুর-১২’র সি- ব্লক, ৬-নম্বর রোড ও খেলার মাঠে কয়েকশত দোকান বসিয়ে চাদা তুলছে ঢাকা সিটি উত্তরের প্রভাবশালী এক নেতার আপন ছোট ভাই। তাই পল্লবী থানা পুলিশ প্রশাসনও নিশ্চুপ।
মিরপুর- ১২’র সি-ব্লকে মাঠের যে করুন দশা তা আর কয়েক বছর গেলে কোন চিহ্ন থাকবেনা। দেশে শিশুদের খেলা ধুলার মাঠ রক্ষা করা ভিষণ প্রয়োজন না হলে হারিয়ে যাবে দখলের পালাক্রমে শিশুদের খেলা ধুলার মাঠ ।