মীর আলাউদ্দিনঃ প্লাষ্টিকের পাইপ লাইনে অবৈধ্য গ্যাসের সংযোগের ছড়াছড়ি, মানহীন বৈদুতিক তার দিয়ে অবৈধ্য বিদুৎ সংযোগ, ফায়ার সার্ভিস এর গাফলতি আর নিজেদের দখলবাজিকেই আগুনে বস্তি পোড়ার মূল কারণ হিসেবে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায় রাজধানীর মিরপুর রুপনগর এলাকার ঝিলপাড় বস্তির প্রায় সাত হাজার ঘর। পুড়ে যাওয়া ঘর নিয়েও তৈরি হয়েছে বেশ ধ্রুমজাল।
ফায়ার সার্ভিসের বরাত দিয়ে জানা যায়, সেখানে ঘর পুড়েছে প্রায় দুই হাজার, স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন পুড়ে যাওয়া ঘরের সংখ্যা ছিল দশ হাজারের মতো, আর পুড়ে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করে ত্রান ও দূর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনাম ঘটনাস্থলে প্রেসবিফিং এ বলেন পুড়ে যাওয়া ঘরের সংখ্যা ছিল প্রায় বাইশ হাজার। যে বস্তি নিয়ে এতো কিছু সেই বস্তিতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল টাকার খনি। কালেকশনম্যান এর মাধ্যমে জানা যায়, সেই বস্তিতে তিতাস গ্যাস এন্ড ডিষ্টিবিউশন কোম্পানীর কর্মকতাদের ম্যানেজ করে প্লাষ্টিকের পাইপের মাধ্যমে এই সাত হাজার ঘরেই অবৈধ্য গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত করা হয়।
প্রতি ঘর থেকেই অবৈধ ভাবে গ্যাস বিল বাবদ নেওয়া হয় এক হাজার টাকা করে। আগুন লাগার কিছু সময়ের মধ্যেই গ্যাসের সংযোগ দেওয়া প্লাষ্টিকের পাইপ পুড়ে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে বস্তির পুুুুরো এলাকাজুড়ে । আগুনে পুড়ো বস্তি এলাকা পুড়ে গেলেও তিতাস গ্যাস কতৃপক্ষের দেখা মিলেনি। আগুনে পুড়ে পুরো বস্তি ছাই হয়ে যায় রাত এগারোটার মধ্যে, রাত তিনটার দিকে তিতাস গ্যাস এর একটি গাড়ি এসে পুরো এলাকা জুড়ে চিরুনী অভিযান চালায় অবৈধ্য গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদের জন্য। বস্তির প্রতি ঘরেই ডেসকো এর অসাধু কর্মকতাদের মাসিক মাসোহারা নিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে মানহীন তার দিয়ে অবৈধ্য বিদুৎ সংযোগের। যা থেকে বিল বাবদ কালেকশন করা হয় প্রতি ঘর থেকে পাঁচশো থেকে দেড় হাজার টাকা। আগুন লাগার পর পরই বিদ্যুতের মানহীন তার পুড়ে দ্রুততার সাথে সমস্থ বস্তিঘরে ছড়িয়ে পরে বলেও জানিয়েছেন সেখানে বসবাসরত বাসিন্দারা। আগুন লাগার ছয় মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসে ফোন করে জানানো হলেও আধাঘন্টার আগে সেখানে কোন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দেখা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা ঘটনাস্থলে ছয় মিনিটের মধ্যে পৌছেছে এবং তাদের চব্বিশটি ইউনিট আগুন নিভানোর জন্য কাজ করেছে এমন কথা শোনার পর পরই ক্ষেপে যায় উপস্থিত জনতা। প্রতক্ষ্যর্দশীরা জানান ফায়ার সার্ভিসের চারটা ইউনিট আধা ঘন্টা পর আসে এবং আগুনে পুড়ে যাওয়া যখন শেষ পর্যায়ে তখন একাধিক ইউনিট এসে তাদের সাথে যুক্ত হয়।
যদি ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট এক যোগে কাজ করতো তবে দেড় হাজারেরও বেশি ঘর পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতো। উপস্থিত অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন ফায়ার সার্ভিস এর ২৪টা ইউনিট যদি কাজ করে থাকে তবে তারা বলুক কোন ঘরটা তারা আগুনে পোড়া থেকে রক্ষা করতে পেরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, বস্তির থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা আয় হয়। এই বস্তি দখল নিয়ে আঃ রহিম সরদার , কারেন্ট দুলাল, হাজ্বী রজ্জবের গত কয়েক মাস যাবৎ অভ্যন্তরীন কোন্দল চলছে বলে গোটা এলাকায় গুঞ্জন হচ্ছে। বস্তিটা নিজেদের একক দখলে নিতেও আগুন লাগানো হতে পারে বলে এলাকাবাসী জানান। পুড়ে যাওয়া বস্তির বেশিরভাগ ঘরই ছিল কারেন্ট দুলালের এবং মাদক সম্রাট নজুর বোনের। আগুন লাগার হাত থেকে রেহায় পেতে দুদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন রহিম ও হাজ্বী রজ্জব।
সরজমিনে দেখা যায়, হাজ্বী রজ্জবের বাসার সামনে ও রহিমের এলাকার অনেক ঘরেই র্স্পশ করতে পারেনি আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখা। সামনের কিছু অংশে দখল করে রাখা হাজ্বী রজ্জবের ও রহিমের কিছু ঘর আগুনে পুড়লেও তাদের মূল বস্তি অক্ষতই থেকে যায় দেখে অনেকেই আগুন লাগার অভিযোগের তীর তুলছেন হাজ্বী রজ্জব ও রহিমের দিকে। বস্তির জায়গাটি সরকারী সেখানেই বস্তি ঘর বানিয়ে এই চক্রটি নিজেদের আয় রোজগার শুরু করেছিলেন অনেক বছর আগে থেকেই। ছয় ফিট বাই আট ফিট একেকটি ঘর বানিয়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকা প্রতি রুম ভাড়া দিয়েই এই চক্রটি মাসে আয় করতেন লক্ষাধিক টাকা। এখন কার একক নিয়ন্ত্রিত হবে আর কে এই সরকারী জায়গাটি এর কে নিজ দখলে নিয়ে আয় রোজগার করবেন তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন এলাকাবাসী। পর্ব-১