সেনা-পুলিশের অভিযানের পরও শরিফের জুয়ার বোর্ড আবার সক্রিয়
নিজস্ব প্রতিবেদক │ ঢাকা │ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রাজধানীর মিরপুর পল্লবীর এভিনিউ-৫ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ভয়াবহ ও প্রকাশ্য জুয়ার আসর। শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনী অভিযান ও পরের দিন শনিবার রাতে পল্লবী থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে বেশ কয়েকজন জুয়ারিকে আটক করলেও মাত্র ঘণ্টা-ব্যাপারে সেই জুয়ার বোর্ড পুনরায় চালু হয়ে যায়—স্থানীয়দের মধ্যে ভীতি ও অবিশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ওই ঘরে জুয়ার আসর চললেও সেই ভবনটি আদতে দখল করেই রাখা হয়েছে। সেখানে অন্য ভাড়াটিয়াও বসবাস করেন বলে জানানো হলেও প্রতিদিনই ঘরে-ঘরে লুকিয়ে রাখা হয় দেশীয় অস্ত্র; বাইরে সন্ধ্যার পরে কেউ গেলে তাকে খুঁজে বের করে সার্চ করা হয়।
এমনকি অপরিচিত কেউ গেলে তাদের হাত-পা বাঁধার শিকারও হতে হয় বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন। “শরিফ ওই ঘরটা দখল করেছে, ওদের কাছে দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা আছে, কেউ কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের বাহিনীর লোকেরা পিটিয়ে মারতে ছাড়ে,” বলেন এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা।
জানাগেছে, মিরপুর ১১ এভিনিউ ৫, ১৭ নম্বর লাইনের পূর্ব দিকে নামায় ৫ আগস্টের পর থেকে এ জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করে আসছে শরিফ গং।
স্থানীয়দের ভাষ্য, জুয়ারী নির্ভয়ে অংশ নিতে স্ত্রীর শেষ সম্বল-গহনা পর্যন্ত বন্ধক দিয়েছেন; এমনকি দুই জুয়ারী টাকার যোগানের জন্য তাদের স্ত্রীকে পর্যন্ত শরিফের কাছে রাখার প্রস্তাব পেশ করেছে, এমন ভয়ঙ্কর কথাও এলাকায় ছড়িয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ জুয়ার বোর্ড পরিচালনার পিছনে শুধু শরিফুল ইসলাম শরিফই নন; রয়েছেন কিশোর গ্যাং ও স্থানীয় এক কথিত বিএনপির রাজনৈতিক নেতাও। শাহ পরাণ, আসিক (অর্থাৎ ভাগিনা আসিক), রফিক, আরিফ ও রজ্জব সহ কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্য সরাসরি জুয়ার টেবিল ও স্পট নিয়ন্ত্রণে জড়িত। তারা শুধু জুয়া নিয়ন্ত্রণ করে না—এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ভীতি প্রদর্শনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশি টহল চলমান থাকা সত্ত্বেও স্থানীয়দের প্রশ্ন—আরো কড়া কী কারণে নেয়া হচ্ছে না? এক অংশগ্রহণকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানালেন, “প্রতি সপ্তাহে শরিফ পুলিশের নামে ৩০ হাজার টাকা দেয়; বাড়ির মালিক প্রতিদিন নেন ৩ হাজার টাকা, বাড়ির ম্যানেজার পান ১ হাজার টাকা”—যার অর্থ দাঁড়ায় সরকারি সংস্থার অন্ধত্ব না, নাকি যোগসাজশ?
ঘটনার টাইমলাইনও চিন্তার উদ্রেক করছে।
গত ৮ এপ্রিল ২০২৫ র্যাব-৪ পল্লবীর প্যারিস রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে শরিফসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে; তাদের কাছ থেকে তাস, মোবাইল ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। মামলা করেও পরে শরিফ আবার জুয়ার আসর সচল করে।
শুক্রবার সেনাবাহিনী অভিযানে মূল হোতা পালিয়ে গেলেও বাড়ির ম্যানেজারকে আটক করে; এরপর শনিবার রাত পল্লবী থানা পুলিশের সিভিল টিম যৌথভাবে অভিযানে ১১ জন জুয়ারিকে আটক করে—কিন্তু বাকিরা পালিয়ে যায় এবং রাত চুকিয়ে জুয়া পুনরায় শুরু হয়।
তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য
এ বিষয়ে পল্লবী থানা তদন্ত কর্মকর্তা কাইয়ুম বলেন, “আমরা অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করেছি। যদি আবারো জুয়ার বোর্ড চালু হয় তবে পুনরায় অভিযান চালাবো।
”স্থানীয়রা বলছেন, কেবল সাময়িক অভিযান বা সংঘর্ষে অভিযুক্তদের সাময়িক গ্রেফতার যথেষ্ট নয়—নিয়মিত ও কার্যকরী ব্যবস্থা ছাড়া জুয়ার আসর বন্ধ হবে না। তাদের দাবি: সৈনিক, র্যাব ও পুলিশকে সমন্বিতভাবে, পরিকল্পিত অভিযানে দখল হওয়া ভবন উদ্ধারের পাশাপাশি সেখানে লুকিয়ে থাকা অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য জব্দ করে স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও অংশীদারদের আইনের আওতায় আনা হোক।
আইনের প্রয়োগ ছাড়া পল্লবী এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে—চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান। “দিনরাত জুয়ার আসর জমে, অথচ পুলিশ টহল গাড়ি শুধু ঘুরে বেড়ায়—এটা কি তাদের অন্ধত্ব, নাকি যোগসাজশ?”—এ প্রশ্নটি এখন পুরো পল্লবীবাসীর কাছে অনকাশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।