নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নেশাগ্রস্ত ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের পরিবহন কোম্পানি থেকে বের করে দেয়া হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিকল্প পরিবহন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে তেতুলিয়া পরিবহনের প্রধান কার্যালয়ে ‘নিরাপদ সড়কের জন্য চালকদের সচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেক চালকের বাধ্যতামূলক ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদের লাইসেন্স করাতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ৩১ ডিসেম্বর লাইসেন্স করার শেষ তারিখ তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্য লাইসেন্স করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘কোন চালক নেশা করে গাড়ি চালাচ্ছেন কিনা- তা নিরূপণ করার প্রযুক্তি এসেছে আমাদের দেশে। ফলে নেশা করে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে ওই চালকের ধরা না পড়ার কোন সুযোগ থাকছেনা। সাত দিন আগেও যদি কোন চালক নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে থাকে, তাও ধরা পড়বে ওই যন্ত্রে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালালে কঠিন সাজা পেতে হবে।’
অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান গাড়ি বের করার আগে গাড়ির চাকা, যন্ত্রাংশ ভাল করে দেখে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ওভারটেকিং, আগে যাওয়ার বেপরোয়া প্রতিযোগিতার কারণে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। তাই আমাদের ওভারটেকিং বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের পরিবহনের সাফল্য তুলে ধরে পরিবহনখাতে সরকারের গৃহীত সকল কার্যকরী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন মাহবুবুর রহমান। চালকদের উন্নত প্রশিক্ষন ও বিভিন্ন সভা, কর্মসূচীর মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে তিনি সকল পরিবহনকে আহ্বান জানান এবং তেতুলিয়া পরিবহনের আয়োজিত সভার সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধান বক্তা শাহজাহান বাবুল মাদকের কুফল তুলে ধরে বাসচালক ও হেলপারদের নেশাজাতীয় সকল দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে আহ্বান করেন।
তিনি বলেন, ‘একজন চালককে শুধুমাত্র বাসের যাত্রীদের জন্যে নয় নিজের পরিবারের জন্যে অনেক কিছু করার আছে। একটা দুর্ঘটনা শুধুমাত্র যে আহত বা নিহত হয়েছে তার বা তাদের পরিবারের জন্য যেমন কষ্টদায়ক তেমন চালকদের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-ছেলেমেয়েদের উপর কষ্টকর হয়ে দাড়ায়। আর এ চিন্তা মাথায় রেখে গাড়ি চালাতে হবে।’
বাস চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি যাত্রা শুরু বা শেষের স্থান ব্যতিত যত্রতত্র ধূমপানের ব্যাপারে বিরত থাকতে বলেন অন্যথায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ভুইয়া হুমায়ূন কবির তপন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সড়ক দূর্ঘটনায় বাস মালিকদের দায়ী বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বাস মালিকরা শুধুমাত্র সকালে একজন ড্রাইভার বা হেলপারের কাছে দিয়ে দেয় এবং রাত্রে টাকার হিসেব নিতে আসে। কিন্তু মাঝে কে তার গাড়ি চালাচ্ছে সেটা তার জানার বাইরে। আর এ সুযোগ নিয়ে বদলি অদক্ষ ড্রাইভাররা গাড়ি চালাচ্ছে যার ফলে দূর্ঘটনা ঘটছে।’ তিনি চালক, হেলপারদের নিয়মিত খোঁজখবর নেয়ার জন্য মালিকদেরকে আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন তেতুলিয়া পরিবহনের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান এবং সঞ্চালনায় ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ মাসুম।
আব্দুল ওয়াদুদ মাসুম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ মাদক সেবন। নেশাসক্ত চালকদের দ্বারাই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। মুষ্টিমেয় দায়ী চালকদের কারণে আমরা পুরো পরিবহন খাতকে দোষারোপ করতে পারিনা। কিন্তু আজকে তাই ঘটছে। অল্প কিছু দোষী চালক-শ্রমিকদের জন্য সারা দেশের মানুষের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সব চালকদের প্রতি আমার অনুরোধ- নেশা ছাড়ুন, সুস্থ জীবন-যাপন করুন। নেশা না ছাড়লে পরিবহন খাতে আগামিতে চালকদের জায়গা হবে না।
চালকদের নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কখনো ওভারটেকিং করবেন না। মানুষের জীবনের চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। একটি দুর্ঘটনা কারো জীবন কেড়ে নিতে পারে। কারো জীবনের বিনিময়ে উপার্জিত টাকা আমার দরকার নেই। সবসময় সচেতনভাবে গাড়ি চালাবেন।
অনুষ্ঠানে এক বাসচালক বাসের শুরু বা শেষের স্থানে সিরিয়ালের জন্যে পাশাপাশি একই কোম্পানীর বাসের যে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তেতুলিয়া পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ মাসুম তা দমনে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা জরিমানা অথবা যে বাসচালক এমন আচরণ করবে সে বাসকে ওইদিনে আর কোন ট্রিপের ব্যবস্থা করা হবে না বলে কঠোরভাবে জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘তেতুলিয়া নদীর পাড়ের অনেক জ্ঞানী-গুনীদের কথা স্মরণ করে এই পরিবহনের নামকরণ করা হয়েছে।’ সড়ক দূর্ঘটনার কারনে এর সুনাম যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে সকল চালক ও স্টাফদের সজাগ থাকতে বলেন।
প্রায় ৭০জনের অধিক বাস চালক ও স্টাফ নিয়ে আয়োজিত সভায় অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয় এবং সকল চালক ও হেলপারদেরকে নেশা না করার শপথ পাঠদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। অনুষ্ঠানে শপথ পাঠ করান সভার প্রধান অতিথি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিকল্প পরিবহন সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।