রবিবার , ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন ও আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বিনোদন
  10. বিশেষ সংবাদ
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সাহিত্য

ডিআইজি মিজানের ‘স্বর্ণকমল’ ও পরিবারের ক্ষমতার দাপট অনলাইন

প্রতিবেদক
bangladesh ekattor
জানুয়ারি ১৪, ২০১৮ ৬:২৬ অপরাহ্ণ

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে ঢাকার সেই বিতর্কিত ডিআইজি মিজানের স্বর্ণকমলের সন্ধান মিলেছে। শুধু স্বর্ণ কমলই নয় এখানে তার আত্মীয়স্বজনরাও ক্ষমতার চরম দাপট দেখিয়ে রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ মিলেছে। এদের কথা না শুনলে ঢাকায় বসে ডিআইজি মিজান ক্ষমতার দাপট দেখাতেন। তার ভয়ে তটস্থ থাকতো স্থানীয় থানায় কর্মরত পুলিশও।
মেহেন্দিগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রমজীবী বাবা আলী আকবরের ২ ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে তৃতীয় মিজান। অভাব-অনটনে চলতো তাদের সংসার।
তাদের ছিল ছনের (কাঁচা) ঘর। ওই ঘরে বৃষ্টির সময় পানি চুয়ে পড়তো। দরিদ্র পরিবারের সন্তান মিজান ছোটবেলা থেকেই ছিল মেধাবী। ১৯৮০ সালে মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট পিএম স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন তিনি। ৮২ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন এফ রহমান হলে।
মিজানের পুলিশ বিভাগে চাকরি হওয়ার পরই ভাগ্য খুলে যায় পুরো পরিবারের। দুই হাতে অর্থ কামিয়ে কয়েক বছর আগে মেহেন্দিগঞ্জ পৌর শহরের পাতারহাট-উলানিয়া সড়কের পাশে কালীকাপুর এলাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন বিশাল বাউন্ডারি ঘেরা বিলাসবহুল দোতালা বাড়ি ‘আমেনা ভিলা’। মেহেন্দিগঞ্জের লোকজনের কাছে ওই বাড়িটি ‘স্বর্নকমল’ হিসেবে পরিচিত।
মেহেন্দিগঞ্জের এক সাবেক সংসদ সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, শুধু মেহেন্দিগঞ্জে নয়, ঢাকা পুলিশ হেড কোয়ার্টারের যাবতীয় নিয়োগ-বদলী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রন করতেন ডিআইজি মিজান। অবৈধ এই বাণিজ্য করে অগাধ টাকার মালিক হন তিনি। মেহেন্দিগঞ্জে তেমন একটা আসা যাওয়া না থাকলেও ঈদে এবং কোরবানীর সময় এলাকায় আসতেন তিনি। এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দরিদ্রদের মাঝে ডিআইজি মিজান অনেক দান-ছদগাহ দিতেন বলে জানিয়েছেন ওই সাবেক সংসদ সদস্য।
ডিআইজি মিজানুর রহমানের ক্ষমতার দাপটে গত কয়েক বছর ধরে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল তার ছোট ভাই মো. স্বপন এবং ৩ ভগ্নিপতি। তারাই নিয়ন্ত্রন করে আসছিলেন মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের যাবতীয় তদবির বাণিজ্য। আসামি ধরা, ছাড়া, জিডি, মামলা, চার্জশীট সবই হতো ডিআইজি মিজানের ছোট ভাই স্বপন ও তার ৩ ভগ্নিপতির ইশারায়।
এমনকি ডিআইজি মিজানের ছোটভাই স্বপনের অন্যায় আবদার না রাখায় ২০১৬ সালের মাঝামঝি সময়ে বদলী করে দেয়া হয় মেহেন্দিগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই শাহজাহানকে। তিনি বর্তমানে আগৈলঝাড়া থানায় কর্মরত।
এসআই শাজাহানের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানান, মেহেন্দিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একটি ফার্মেসি রয়েছে মিজানের ছোট ভাই স্বপনের। ভাইয়ের প্রভাবে ওই ফার্মেসীতে বসেই পুলিশের সব বিষয়ে খবরদারী করতেন তিনি।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই শাজাহান পাতারহাট বন্দরে কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেল আটক অভিযান পরিচালনা করছিলেন। এ সময় স্বপনের ফার্মেসীতে ওষুধ কিনতে যাওয়া এক মোটর সাইকেল আরোহীর মোটর সাইকেল আটক করেন শাজাহান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই মোটর সাইকেল ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি পাশের ফার্মেসীতে ওষুধ কিনতে যাওয়া ক্রেতাদের মোটর সাইকেল আটক করতে বলেন ডিআইজি মিজানের ক্ষমতাধর ভাই স্বপন। কিন্তু এতে রাজি হননি এসআই শাজাহান। ডিআইজি মিজানের ভাইয়ের অন্যায় আবদার না রাখায় এসআই শাজাহানকে তাৎক্ষনিক প্রত্যাহার করে শাস্তিমূলক বদলী করা হয় বাবুগঞ্জের আগরপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে। ওই সময় তার দুই সন্তান মেহেন্দিগঞ্জের একটি স্কুলে পড়তো। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য শিক্ষা বছরের শেষ অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্ব-স্থানে থাকার আকুতি করেও বিফল হন এসআই শাজাহান।
ডিআইজি মিজানের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তার ভাই ও ৩ ভগ্নিপতিদের দাপটের বিষয়ে ওই সময়ে স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ করা হলে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মিজান ও তার ভাইয়েরা। ওই সংবাদের প্রেক্ষিতে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়ে মেহেন্দিগঞ্জের ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করান ডিআইজি মিজান। ওই মামলায় বরিশালের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এক কর্মকতার উপর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র পর্যন্ত দাখিল করানোর অভিযোগ রয়েছে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। যদিও পরবর্তীতে ওই মামলার বাদী আদালত থেকে মামলা তুলে নেয়ায় ডিআইজি মিজানের রোষানল থেকে বেঁচে যান স্থানীয় ৩ সাংবাদিক।
মিজানের রোষাণল থেকে বেঁচে যাওয়া মেহেন্দিগঞ্জের সাংবাদিক সঞ্জয় গুহ জানান, ডিআইজি মিজানের ক্ষমতার দাপটের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পর ডিআইজি মিজান ও তার ভাই স্থানীয় সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এর এক সপ্তাহ পর তার অনুগত ইউপি সদস্য মনির চাপরাশীকে দিয়ে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক আক্তার হোসেন খোকন, তিনি (সঞ্জয় গুহ) এবং সঞ্জয় দেবনাথের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজি মামলা করান। ওই মামলায় আদালত পিবিআইকে তদন্ত প্রতিদেন দেয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পিবিআই’র তৎকালীন পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন সরেজমিন তদন্ত না করেই ডিআইজি মিজানের প্রভাবে বরিশালে বসেই তাদের ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে আদালতে প্রতিবেদন দেন।

ওই সময় পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার ডিআইজি মিজানের নির্দেশে ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এমপি’র কাছে স্বীকার করেন।
মেহেন্দিগঞ্জের পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দিন খান বলেন, মেহেন্দিগঞ্জে একটা সুন্দর বাড়ি করেছে মিজান। সবাই বলে ‘এসপি সাহেবের’ বাড়ি আবার কেউ বলে ‘স্বর্ণকমল’। সেই হিসেবে মিজানকে নামে চেনেন তিনি। মেহেন্দিগঞ্জের একজন সন্তান পুলিশের বড় পদে চাকুরী করায় এতদিন তাকে নিয়ে গর্ব করতেন স্থানীয় মানুষ। কিন্তু ঢাকায় নারী কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে পড়ায় এখন সবাই ছি- ছি- করছে। এটা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে।
[এমকে] মাবনজমিন

সর্বশেষ - রাজনীতি