সোমবার , ১৬ জুলাই ২০১৮ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আওয়ামীলীগ
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বি এন পি
  10. বিনোদন
  11. বিশেষ সংবাদ
  12. রাজধানী
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সাহিত্য

খলশে মাছের কৃত্রিম পোনা উৎপাদনে সাফল্য বাংলাদেশ বিজ্ঞানীদের

প্রতিবেদক
bangladesh ekattor
জুলাই ১৬, ২০১৮ ২:১১ অপরাহ্ণ

স্টাফ রিপোর্টার বাংলাদেশ একাত্তর

বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো খলশে মাছ পুকুরে চাষের উপযোগী করলেন। এত দিন পুকুরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এই মাছের পোনা উৎপাদন করা হতো না। শুধু নদী-খাল-বিলের মতো প্রাকৃতিক জলাশয়ে এটি বড় হতো। পুকুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এর পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন। এতে জনপ্রিয় এই ছোট মাছ পুকুরে চাষে কোনো বাধা থাকল না।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহে সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইনস্টিটিউটের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্র থেকে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। গবেষক হিসেবে ছিলেন উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রাশিদুল হাসান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শওকত আহমেদ।

খলশে বাংলাদেশের অতি পরিচিত ও দেশীয় প্রজাতির একটি মাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম কলিসা ফ্যাসিয়েটাস (Colisa fasciatus), যা আমাদের দেশে খৈলশা, খলিশা, খৈইলা নামে পরিচিত। প্রাকৃতিকভাবে এ প্রজাতি মূলত বাংলাদেশসহ, ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়। মিঠা পানির জলাশয়ে, বিশেষ করে পুকুর, নদী, ঝরনা, খাল, বিলে একসময় এ মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। ধান ও সবজি চাষে কীটনাশকের যথেচ্ছ প্রয়োগ, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা, কলকারখানার বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি কারণে এর বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। এর প্রজননও কমে যাচ্ছে। এর প্রাচুর্যও ব্যাপক হারে কমছে।

এ পরিস্থিতিতে এই প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে ও চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে খলশের কৃত্রিম প্রজনন-কৌশল উদ্ভাবন করেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। ২০১৬ সাল থেকে সংস্থাটির সৈয়দপুর উপকেন্দ্রে প্রাকৃতিক উৎস থেকে খলশে মাছ সংগ্রহ করে তা পুকুরে প্রতিপালন, ডিম ধারণ ক্ষমতা নির্ণয়, সঠিক প্রজননকাল চিহ্নিতকরণসহ অন্যান্য গবেষণা পরিচালনা শুরু করা হয়।

এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বাংলাদেশ একাত্তর’কে বলেন, খলশে মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে এই মাছ চাষের পোনা পাওয়া সহজতর হবে এবং ভবিষ্যতে বিলুপ্তির হাত থেকে এটি রক্ষা পাবে। তিনি জানান, ইনস্টিটিউট থেকে এর মধ্যে ১৮টি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ-কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা, মহাশোল ইত্যাদি অন্যতম। সাম্প্রতিক কালে পাবদা, গুলশা ও ট্যাংরা-জাতীয় মাছের প্রাপ্যতা বাজারে ব্যাপক বেড়েছে। এসব মাছের ক্রয়মূল্য সাধারণ ভোক্তাদের নাগালে।

গবেষণায় দেখা যায়, পুকুরে ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার (১৫-২০ গ্রামের) খলশে মাছ পরিপক্ব হয়ে থাকে। মাছটির বয়স, আকার ও ওজন অনুপাতে ডিম ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজার থেকে ১৩ হাজার এবং প্রজননকাল মে থেকে সেপ্টেম্বর। এসব তথ্যের ভিত্তিতে উপকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে ১২ জুলাই মাছটির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনের কলাকৌশল উদ্ভাবনে সাফল্য পান।

সংস্থাটির গবেষকেরা জানান, প্রজনন মৌসুমের আগেই প্রাকৃতিক উৎস থেকে কিশোর বয়সের মাছ সংগ্রহ করে উপকেন্দ্রের পুকুরে পোনা প্রতিপালন করা হয়। প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ব স্ত্রী ও পুরুষ মাছ পুকুর থেকে সংগ্রহ করে হ্যাচারি ট্যাংকে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা রাখা হয়। পরে হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। হরমোন ইনজেকশন প্রয়োগের ১৩ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর মা খলশে মাছ ডিম দেয়। ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপন্ন হয়।

সংস্থাটির বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে খলশে মাছ চাষের পোনা প্রাপ্তি সহজতর হবে এবং চাষাবাদ সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে প্রকৃতিতে প্রজাতিটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে এ মাছকে খাবারের মাছ ছাড়াও অ্যাকুয়ারিয়াম বা বাহারি মাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাহারি মাছ হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে।

সর্বশেষ - সর্বশেষ সংবাদ