বাংলাদেশ একাত্তর প্রতিবেদক : সমাজ গড়ার অন্যতম কারিগর হলেন শিক্ষক। কিন্তূ বর্তমানে বাস্তবতা উল্টো দিকে নিয়ে গেছে কুতুবজম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক মোঃ মনোয়ার কবির (৩৪)।, মনোয়ার কবির কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্ৰামের সাবদার আলীর ছেলে।
জানা গেছে, পারিবারিক ভাবে ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মনোয়ারা (২৬) র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শিক্ষিত বেকার যুবক কবীরের সাথে। চাকরি না থাকায় নানা চেষ্টার পরেও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ে তুলতে পারছিলেন না কবির।
কিন্তু যখন শ্বশুর বাড়ীর দেওয়া চার লক্ষ টাকা দিয়ে চাকরি পান কবির তারপর থেকে গিরগিটির মতো রঙ বদলাতে আরম্ভ করেন। পরর্বতীতে শিক্ষক মনোয়ার কবির আরও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবিতে করে।
পরে স্ত্রী অপারগতা প্রকাশ করিলে ক্ষিপ্ত হয়ে চর মেরে স্ত্রীর কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয় যৌতুক লোভী শিক্ষক স্বামী মনোয়ার কবির। যৌতুকের টাকা না দিলে দ্বিতীয় বিয়ে করবে, না হয় স্ত্রীকে তালাক দেবে অথবা স্ত্রীকে হত্যা করবেন বলেও হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে স্ত্রী মনোয়ারা জানান, সংসারে সুখের আশায় কবিরের চাকরির জন্য প্রথম দফায় ৪লক্ষ টাকা দিই। চাকরি পাওয়ার পর কিছুদিন সংসারে সুখের বাতাস বইলেও পরে নেমে আসে দুঃখের সাগর। তিনি আরও বলেন, চাকরির সুবাদে কবির কক্সবাজারে মহেশখালীতে অবস্থান করার কারণে দাম্পত্য জীবনে দুরত্ব সূষ্টি হয়। আবারও আমার কাছ থেকে টাকা নিতে নানা ফন্দি ফিকির শুরু করে। আরও ৫’লক্ষ টাকা না দিলে সে দ্বিতীয় বিয়ে করার হুমকি দেয়।
মনোয়ারা আরও বলেন, কবির ছুটিতে ঢাকায় এসে আমাকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। কবির আমার বাম কানে থাপ্পড় মারলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে আমার বাম কানে শ্রবন শক্তি লোপ পায়।
পরে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আবারো দাম্পত্য জীবন শুরু হলে আমি গর্ভধারণ করি। এক পর্যায়ে আমার গর্ভধারনের কথা কবির কে জানালে সে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলতে বলে। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে আমাকে ভুল বুঝিয়ে শ্যামলী লাইফ এন্ড কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলে। আমি মানুষিক ও শারিরীক নির্যাতন সয্য করে সংসার করতে চাইলেও কবির আমাকে বারবার ডিভোর্সের হুমকি দেয়। কোন উপায় না পেয়ে অবশেষে আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা দায়ের করি।
এই ব্যাপারে মুঠোফোনে মনোয়ার কবিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আমি আইনগত ভাবে মোকাবেলা করব। এ ব্যাপারে আপনাদের সাথে কোনো কথা বলতে চাইনা।
এ বিষয়ে কবিরের কর্মস্থল মহেশখালীর কক্সবাজার জেলা কুতুবজম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ শফিউল আলম বলেন, মনোয়ার কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেব আমরা।
এদিকে মহেশখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মান্নান বলেন, এই বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাকে কেউ এই ব্যাপারে কোন ধরনের অভিযোগ করেনি। তাছাড়া বিষয়টি পারিবারিক। তারপরেও আমি বিষয়টি দেখবো।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: জামিরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারটা ভুক্তভোগী কিংবা তার পরিবার আমাকে কিছু জানাননি। তিনি আরও বলেন, ওই স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতিও আমাকে কিছু জানাননি।
উক্ত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেব। তাছাড়া এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে তাহলে ওই শিক্ষকের স্ত্রীকে আমাদের পক্ষথেকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেব।
ভুক্তভোগী মনোয়ারার পরিবারের সদস্যরা জানান, বিয়ের পর কবির বেশ ভালো ছিলো। তার চাকরির জন্য আমরা ৪লক্ষ টাকা ও দিয়েছি মনোয়ারার সুখের কথা চিন্তা করে। পরে সে স্কুলে শিক্ষকের চাকরি পান। আর তারপর থেকে আবারও যৌতুকের টাকা দাবি করে আসছে।
পরিবার সুত্র আরও জানায় কবিরের দাবিকৃত টাকা আমারা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মনোয়ারার উপর নানা ভাবে নির্যাতন চালায়। কবির নানা ভাবে তালাক দেয়ার ও হুমকি-ধামকি দেয়। এমনকি সে হত্যার হুমকিও দেয়। মনোয়ারার জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পরে মামলা করেছি।