রাতে ছেলে বউ’ঘুমায়” মা’বাবা থাকে বাইরে! পেটের খুধায় রাতে ঘুম আসেনা!!
বাংলাদেশ একাত্তর. কম (সাদ্দাম হোসেন মুন্না)
ঢাকার মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর সেকশনে ছোট-বড় অনেকগুলো (উর্দুভাষী) বিহারি ক্যাম্প। উর্দুভাষী হলেও তারা বাংলাদেশে বিহারি নামেই পরিচিত।
সরকারের হিসাবে বিহারি ক্যাম্পের সংখ্যা ২৬। বিহারি নেতাদের দাবি, বর্তমানে ক্যাম্প আছে মোট ৪১টি। ক্যাম্পগুলোর অবস্থান সবই পল্লবী থানাধীন ও ঢাকা-১৬ আসনে। এ আসনে “উর্দুভাষী” (বিহারি) ভোটারের সংখ্যা প্রায়ই এক লাখ। আর জনসংখ্যা পাঁচ লাখের অধীক। স্বাধীনতার পর (উর্দুভাষী) বিহারিদের বেশির ভাগই ক্যাম্প করে বাংলাদেশে থাকতে শুরু করে। প্রতিটি পরিবারের জন্য জায়গা পায় ১০ বর্গফুট। ১৯৭১ সালের পর জনসংখ্যা বাড়লেও জায়গা বাড়েনি ক্যাম্পবাসিদের।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে বিহারিদের ক্যাম্পগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাচল করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলছেন, যেখানে শোয়া-বসার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই, এমনকি রাতে বউ ছেলে ঘুমাইলে, মা বাবার বাইরে ঘুরাফেরা করে! সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কিভাবে সম্ভব? তাঁরা আরো বলেছেন, সাধারণ ছুটি ও দোকানপাট (মুদি দোকান কাঁচাবাজার ও ওষুধ বাদে) বন্ধ রাখতে বলায় বিহারিদের জীবনধারণও কঠিন হয়ে পড়েছে।
মিরপুরের বিহারি ক্যাম্প গুলো ঘুরে দেখা যায়, ঘরে বসার জায়গা নেই। ভেতরের ছোট ছোট গলির মধ্যে গাদাগাদি করে বসে আছে নারী ও পুরুষরা। শিশু-কিশোরদের নেই খেলার জায়গা।
সরোজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মিরপুরের বিহারিদের বেশির ভাগ লোক বেনারসি পল্লীতে কারচুপির কাজ করে, এ ছাড়া চায়ের দোকান, সেলুন, হকারি ও অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা সংগ্রহ করে। বেশির ভাগই বেকার হয়ে গেছে।
মিল্লাত ক্যাম্পের শামীম, নাদিম শওকত, রাব্বি, জায়েদুল, সালাউদ্দিন, আয়েশা, আকবর, বাবর, জামিলসহ শতাধিক পরিবারের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা এখন পর্যন্ত কোনো খাদ্য সহায়তা বা করোনা প্রতিরোধ সমাগ্রী পাননি। প্রায় অনাহারে রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
মিরপুরে বিহারিদের তিনটি সংগঠন কাজ করে। এর মধ্যে একটি হলো ‘বিবিআরএ (বাংলাদেশি বিহারি রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসেম্বলি বা” বাংলাদেশি বিহারি পুনর্বাসন সংসদ)। এ সংগঠনের নেতা নেয়াজ আহমেদ খান। তিনি বাংলাদেশ ন্যাপের (ভাসানী) মহাসচিব।
‘ইউএসপিওয়াইআরএন (উর্দু স্পিকিং পিপল রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট) নামের আরেকটি সংগঠনের সভাপতি শাহাদত হোসেন খান।
অন্যটি হলো এসপিজিআরসি (স্ট্র্যান্ডেড পাকিস্তানি জেনারেল রিপ্যাট্রিয়েশন কমিটি)। সংগঠনটির প্রধান কাদের খান। মিরপুর এলাকায় এ সংগঠনের সভাপতি হাজী মোহম্মাদ আলী। বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় বিহারিদের মোট ৭৬টি ক্যাম্প রয়েছে।
বিবিআরএর প্রধান পৃষ্ঠপোষক নেয়াজ আহমেদ খান বলেন, ‘মিরপুরের ৪১টি বিহারি ক্যম্পেই এখন অভুক্ত অবস্থা। প্রায় সবাই বেকার। কারো ঘরে খাবার নেই। এরা যেসব পেশার সঙ্গে জড়িত তার সবগুলোই এখন বন্ধ। কিন্তু সরকারের কাছে কোনো হিসাব নেই যে কার আয় কত’ কাকে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা করা প্রয়োজন। এমন তালিকা ছাড়া আসলে খাদ্য সহায়তাও প্রকৃত অসহায়ের হাতে পৌঁছবে না।
ইউএসপিওয়াইআরএনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন খান বলেন’ আমাদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত তিনবার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি নেওয়া হয়েছে ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে। তবে ১৪ দিন হয়ে গেল আমরা কোনো সহায়াতা পাইনি এখনো। তিনি আরও বলেন’ বিহারি ক্যাম্পের লোকগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে কিভাবে, ক্যাম্পে তো গায়ে গায়ে মানুষ। পরিবারের কজন ঘুমায় আবার কজন জেগে থাকে। এভাবে পালাক্রমে ঘুমাতে হয়। এ অবস্থায় সামাজিক দূরত্ব ঠিক রাখা সম্ভব উঠে না ।
মিল্লাত ক্যাম্পের রনি নামের এক যুবক বলেন’ আমার চায়ের দোকান ছিল, এখন বন্ধ। পরিবারের চারজন লোক নিয়ে না খেয়ে আছি। খাবার না পেলে র্যাব-পুলিশ মারলেও আমাকে দোকান খুলতে হবে। এ ছাড়া উপায় কী?।
দেখা গেছে মিরপুর এলাকায় বিহারি ক্যাম্পের পাশাপাশি রয়েছে বহুবস্তি ঘর! দিন মুজুর, রিকশা চালক সহ অতি নিম্ম আয়ের লোকজনের বসবাস। করোনা পরিস্থিতিতে তাদের ঘরেও চুলা ঠিক মত জ্বলছেনা। উল্লেখ্য বস্তিগুলো হলো-বেগুন টিলা বস্তি, টেকেরবাড়ী বস্তি, বাঁউনিয়াবাধ বস্তি, লালমাটিয়া পোড়া বস্তি, মিরপুর ১২, মোল্লা বস্তি, রুপনগর ঝিলপাড় বস্তি, দুয়ারিপাড়া বস্তি, শিয়াল বাড়ী বস্তি, রুপনগর আবাসিক রোড ৩১ ও ৩৯ এর শেষ মাথায় বস্তি। এসব বস্তিতে থাকা অনেকেই ঠিক মত ত্রান পাচ্ছে না ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মুখ চেনা জানাদের ত্রান দেয় ফলে অচেনা ব্যক্তিরা ত্রান পায়না বলেও অভিযোগ বস্তি বাসির।
এবিষয়ে মিরপুর প্রেসক্লাব এর সভাপতি সৈয়দ শফিকুর রহমান বলেন, মিরপুরে বিভিন্ন স্থানে বসবাসরতরা করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যু জেনেও যারা ফুটপাতে দোকান করে ও রিকশা ভ্যান চালায় তারা পেটের ক্ষুধার জ্বালায় করে। তিনি বলেন, তারা যদি সঠিক ভাবে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন সংগঠনের সাহায্য সহযোগিতা পেত তাহলে তারা এই পরিস্থিতিতে আর যাই হোক রাস্তায় নামতোনা। প্রেসক্লাবের সভাপতি আরও বলেন, আমি আমার সংগঠনের সদস্যদের আমার সাধ্যমত তাদের ঘরে বাজার পাঠাবো যাতে তারা “লক ডাউন মেনে ঘরে থাকে” করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা সরকারের পাশে থাকবো।