অনলাইন ডেস্কঃ
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদকে চিহ্নিত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। তবে ৯ মাসব্যাপী এই যুদ্ধে সারাদেশে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এসব গণশহিদের সবাইকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে তাদের চিহ্নিত করতে কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
বুধবার (১৯ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশিত তালিকা থেকে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ে থাকেন, তাদের শনাক্ত করে ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
সংসদ নেতা জানান, ওই তালিকার অংশ হিসেবে বর্তমানে মোট ৫ হাজার ৭৯৫ জন শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, ঠিকানা সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ তালিকা তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে গেজেটভুক্ত বেসামরিক শহিদ ২ হাজার ৯২২ জন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ১ হাজার ৬২৮ জন, বিজিবির ৮৩২ জন এবং গেজেটভুক্ত শহীদ পুলিশ ৪২৪ জন।
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহযোগীদের হাতে নিহত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত গণকবর সংরক্ষণ করার বিষয়ে আমাদের সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সারাদেশে বধ্যভূমি ও গণকবর শনাক্ত করতে ব্যাপক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের গৃহীত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ২৮১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হবে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা অনুধাবন করেছিলেন, গ্রামীণ উন্নয়ন ছাড়া উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করি। এর অন্যতম উদ্দেশ্য গ্রামীণ দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনের আগে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছি। আমাদের স্লোগান— ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। এ লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে আমরা গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছি। আমরা গ্রাম এলাকাতেও সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ সফলতা অর্জন করেছে। গ্রামীণ জনগণের আত্ম-কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, তাদের আয় বেড়েছে। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া, দারিদ্র্য বিমোচন— এগুলো এখন বিশ্বের কাছে উদাহরণ। নগর উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনে নিজের নেতৃত্বে জাতীয় উদযাপন কমিটি ও জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি জানান, এই দুই কমিটির অধীন আটটি উপকমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি দুইটি এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সচিবদের নিয়েও একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে একটি আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার গত দুই মেয়াদে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়ন ও কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, ই-গভর্নমেন্ট ও আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন— এই চার স্তম্ভের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ ও কার্যক্রম হাতে নিয়ে সফল হয়েছি।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সফল উৎক্ষেপণ এবং ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের ব্যবধানে জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট উন্নয়ন সূচকে ১৫০তম থেকে ১১৫তম অবস্থানে উন্নীত হওয়ার সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানান, দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বীমা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতি উপজেলায় এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্য বীমা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।