মঙ্গলবার , ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন ও আদালত
  3. আওয়ামীলীগ
  4. আন্তর্জাতিক
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্য-প্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. বি এন পি
  10. বিনোদন
  11. বিশেষ সংবাদ
  12. রাজধানী
  13. লাইফস্টাইল
  14. শিক্ষা
  15. শিল্প ও সাহিত্য

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে চুক্তি স্বাক্ষর

প্রতিবেদক
bangladesh ekattor
জানুয়ারি ২৩, ২০১৮ ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের পর এখন মিয়ানমারে ফিরতে নানারকম আপত্তি তুলছেন রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারে যথেষ্ট নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব ও ক্ষতিপূরণ দেয়া না হলে ফিরবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই।
কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে কথা হয় সাহারা খাতুনের সঙ্গে।
বাংলাদেশে তার এই শরণার্থী জীবন এটাই প্রথম নয়। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি বাংলাদেশে।
নব্বইয়ের দশকে মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে যখন প্রথমবার তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন, সেবার তাকে এখানে থাকতে হয় এক যুগ।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে এক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হলে ২০০৩ সালে দেশে ফেরার সুযোগ পান তিনি।
সাহারা খাতুনের সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেমন ছিল?
তিনি বলছিলেন, ”বার্মায় ফেরার কিছুদিন পরই ওরা নির্যাতন শুরু করলো। পুনর্বাসনের জন্য যে টাকা পেয়েছিলাম, সেটা ওরা কেড়ে নিয়েছিলো।”
“মাঝে মধ্যেই মিলিটারি এসে নির্যাতন করতো। ওদের ক্যাম্পে বাধ্যতামূলক কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে যায় আমার স্বামী। পরে সে মারা যায়। আমার এক ছেলেও নিখোঁজ।এখনো তার খোঁজ পাইনি।

গতবছর বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর কুতুপালং এ পলিথিনে ছাওয়া মাটির ঘরের ঘিঞ্জি শিবিরেই থাকছেন সাহারা খাতুন ও তার পাঁচ সন্তান।
রোহিঙ্গাদের যে আবারো দেশে ফেরানোর জন্য একটি চুক্তি হয়েছে, সেই খবরটি একান-ওকান হয়ে পৌঁছে গেছে সাহারা খাতুনের কানেও।
দেশে ফিরতে চান কি-না এমন প্রশ্নে রীতিমতো আঁতকে উঠলেন তিনি।
“না, না বাবা, আমরা আর ফিরতে চাই না। ওরা যতোই চুক্তি করুক, ওরা আমাদের নির্যাতন করবেই। মরলে আমরা বাংলাদেশেই মরতে চাই। এখানে তো অন্তত: দুইবেলা খাবার খেয়ে শান্তিতে থাকতে পারি।” বলছিলেন সাহার খাতুন।
গত ১৬ই জানুয়ারি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যে অ্যারেঞ্জমেন্ট নামে প্রত্যাবাসন চুক্তিটি হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে, প্রতি সপ্তাহে দেড় হাজার করে রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গ্রহণ করবে মিয়ানমার।
আর সেটার পদ্ধতি ও পথনকশাও চূড়ান্ত।
সেই মোতাবেক সীমান্তে বাংলাদেশ অংশে থাকবে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প।
প্রত্যেক কর্মদিবসে ৩০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাওয়া হবে সেসব ট্রানজিট ক্যাম্পে।
এরপর সেখান থেকে পাঠানো হবে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের দুটি রিসেপশন ক্যাম্পে।
আর রিসেপশন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদেরকে পাঠানো হবে নিজ নিজ গ্রামে, তাদের ঘরবাড়িতে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অধিকাংশ রোহিঙ্গারই কোন ঘরবাড়ি এখন আর অবশিষ্ট নেই। জায়গা-জমিও বেদখল।
কবে তাদের বাড়ি-ঘর পুনর্নির্মাণ হবে আর রিসেপশন ক্যাম্প থেকে কবে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হবে, তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে বড় হয়ে উঠেছে নিরাপত্তা সংকট আর নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি।

কুতুপালং ক্যাম্পে একটি মসজিদের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে একজন বলছিলেন,
“মিয়ানমারের ওরা অনেক চালবাজ। চুক্তি করেছে, কিন্তু এর কোন বিশ্বাস নেই। সেখানে যদি আমাদের নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক কোন বাহিনী মোতায়েন না থাকে তাহলে আমরা যাব না।”
আরেকজন বললেন, “প্রথমেই আমাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে, চলাফেরার অধিকার দিতে হবে, আমাদের জায়গা-জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ওরা তো আমাদের নাগরিকত্বই দিচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে ফেরার পর মিয়ানমারে আমাদেরকে ওরা কতদিন ক্যাম্পে রাখবে সেটাও তো জানি না। ওরা তো আমাদের অনেকদিন ধরেও আটকে রাখতে পারে।”
মিয়ানমার সরকারের প্রতি রোহিঙ্গাদের এই যে অবিশ্বাস, তার পেছনে আছে আগের দফার তিক্ত অভিজ্ঞতা, আর নির্যাতনের ইতিহাস।
এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গারা ফিরতে না চাইলে পরিস্থিতি হয়ে উঠতে পারে জটিল।
কিন্তু যারা এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তারা বলছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেন শান্তিতে থাকতে পারে চুক্তিতে সেরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কিন্তু এবারও যে পরিস্থিতি ১৯৯২ সালের চুক্তি পরবর্তী অবস্থার মতো হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?

বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলছিলেন, “এবারের চুক্তিতে বলা আছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য, জীবিকা ও বসবাসের জন্য যে ব্যবস্থা নেবে, তা আগেভাগেই আমাদের জানাবে। এমনকি মিয়ানমারে গিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বাংলাদেশের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।”
“সেখানে আসলেই কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে আমরা তা এখানে রোহিঙ্গাদের অবহিত করবো। তারপর প্রত্যাবাসন শুরু হবে। চুক্তিতে আরো বলা আছে, মিয়ানমারের রিসেপশন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দীঘমেয়াদে রাখা যাবে না। আশাকরি নিরাপদেই সবকিছু শেষ হবে।”
তবে বাস্তবতা হচ্ছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শুধু রোহিঙ্গারা নন, বিভিন্ন সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও ।
সংখ্যায় কম হলেও এখনো প্রতিদিন সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসছেন রোহিঙ্গারা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর বলছে, গত এক মাসে নতুন করে ২৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।

কক্সবাজারে সংস্থাটির হেড অব অপারেশন্সের দায়িত্বে থাকা কেভিন জে. অ্যালেন বলছিলেন, “রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে মিয়ানমারে এখনো অনেক কিছুই করার বাকি আছে। প্রত্যাবাসনের যে কোনো প্রক্রিয়া শুরুর আগে নিশ্চিত করতে হবে সেটা যেন স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও টেকসই হয়। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের বক্তব্যও শুনতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব, পূর্ণ নিরাপত্তা ও মিয়ানমারে আইনগত অবস্থানে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা সুস্পষ্ট করতে হবে।”
এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া যে গতিতে এগোচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে শরণার্থীদের প্রথম দলটি স্বদেশে ফিরতে পারবেন অচিরেই।
কিন্তু সেখানে ফিরে তারা নাগরিক অধিকার কতটা পাবেন আর তাদের নিরাপত্তা কতটুকু নিশ্চিত হবে, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।
প্রথম ভাগে যারা ফেরত যাবেন, তারা কী ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাবেন এবং তাদের সঙ্গে কী ধরণের আচরণ করা হবে, তার উপরই নির্ভর করছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে।
সূত্র: বিবিসি

সর্বশেষ - সর্বশেষ সংবাদ